গ্রন্থগত বিদ্যা পর হস্তে ধন নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়ােজন
ভাব-সম্প্রসারণ
গ্রন্থগত বিদ্যা পর হস্তে ধন
নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়ােজন।
মূলভাবঃ
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, "A bird in hand is worth two in the bush." তাই গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরের হাতে ধন রেখে তার গৌরবে গৌরবান্বিত হওয়া নিরর্থক। বিদ্যাকে গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে না করে বিদ্যানুশীলনের মাধ্যমে আমাদের আত্মমুক্তির পথ খুঁজতে হবে। মানুষের মঙ্গলার্থে অর্জিত বিদ্যা ও ধন-সম্পদের ব্যবহারে সমর্থ হতে হবে।
সম্প্রসারিত-ভাব
বিদ্যা ও ধন, এ দুটো মানুষের জীবনে খুবই প্রয়োজন। এ দুটোকে কঠোর
পরিশ্রম ও সাধনা করে অর্জন করতে হয়। প্রয়োজনের মুহূর্তে এ দুটো কাজে না লাগলে
বিদ্যা ও ধন দুটোই অর্থহীন বোঝার মতো মনে হয়। বিদ্যা ও জ্ঞান মানুষ পরিশ্রম করে
আত্মস্থ করে। বাস্তব ও ব্যবহারিক জীবনে সেই বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হয়। এটাই
প্রত্যাশিত। অনুরূপভাবে ধনসম্পত্তি মানুষ কঠিন পরিশ্রম করে অর্জন করে এ জন্য যে,
তা প্রয়োজনের সময় কাজে লাগিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার পাবে, নিজেকে বিপদমুক্ত করতে
পারবে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় সেই ধন যদি অন্যের হাতে থাকে, নিজের কাজে লাগাতে না
পারে, তখন সেই ধনের কোনো মূল্য থাকে না। মুখস্থ বা গ্রন্থগত বিদ্যাও ঠিক সেরকম,
বাস্তব জীবনে মুখস্থ বা গ্রন্থগত বিদ্যাও কোনো কাজে আসে না। বিদ্যা ও ধনের
সার্থকতা নির্ভর করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর ওপর। প্রয়োজনের মুহূর্তে কাজে না
লাগলে এ দুটোরই কোনো মূল্য নেই। তাই বিদ্যা ও ধনকে আয়ত্তাধীন রেখে সেগুলির
সদ্ব্যবহার করতে হবে।
*একই ভাব সম্প্রসারণের প্রতিলিপন
ভাবসম্প্রসারণ: গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধননহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়ােজন
মূলভাব :
গ্রন্থগত বিদ্যা আত্মস্থ না করে জ্ঞানী ভাবা আর পরের হাতে ধন রেখে সে ধন নিজের বলে জাহির করা অর্থহীন। কারণ সে জ্ঞান বা ধন প্রয়ােজনে কোনাে কাজে আসে না।
সম্প্রসারিত ভাব :
মানবজীবনে বিদ্যা ও ধন উভয়েরই প্রয়ােজন রয়েছে। বিদ্যা ও ধন সাধনালব্ধ ফল। কিন্তু বিদ্যা গ্রন্থাশ্রয়ী এবং ধন পরিশ্রমলব্ধ, প্রয়ােজনের তাগিদে সীমাবদ্ধ। বিদ্যার প্রয়ােজন জ্ঞানচক্ষু ফুটানাের জন্য, আর জ্ঞানের বাহনহচ্ছে পুস্তক। এ পুস্তক থেকে শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তি হতে পারে আত্মনির্ভরশীল, সহ্যমী ও আদর্শবান। বিদ্যাকে গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে না করে বিদ্যানুশীলনের মাধ্যমে আমাদের আত্মমুক্তির পথ খুঁজতে হবে। বিদ্যা অর্জন করে শুধু বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ কিংবা পন্ডিত হিসেবে পরিচিতি লাভের মধ্যে বিদ্বানের কোনাে সার্থকতা নেই। বরং অর্জিত বিদ্যারমাধ্যমে জীবনকে সুন্দর ও গতিশীল করার পাশাপাশি সমাজ ও দেশকে উন্নত করার কাজে ব্যবহার করলেই বিদ্যা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়। তদ্রুপ অর্জিত ধন নিজের কাছে না রেখে অন্যের কাছে রেখে সে ধনের মালিকানা নিজের বলে জাহির করা যায় না। কারণ, নিজের কোনাে জরুরি প্রয়ােজনের সময় সে ধন নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই সার্থক ও সুন্দর জীবনেরজন্য বিদ্যাকে বুদ্ধির মাধ্যমে আত্মস্থ করে বাস্তবে প্রয়ােগ করা এবং অর্জিত সম্পদ অহেতুক গচ্ছিত না রেখে প্রয়ােজনেব্যবহার করার মধ্য দিয়েই অর্জিত বিদ্যা বা ধন প্রকৃত সার্থকতা লাভ করে। সুতরাং গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরের হাতের ধনেরকোনাে মূল্য নেই।
মন্তব্য : জ্ঞানার্জন ছাড়া যেমন মনুষ্যত্বের বিকাশ সম্ভব নয়; তেমনি অন্যের হাতে কুক্ষিগত সম্পদ নিজের উপকারে আসে না।
* একই ভাব সম্প্রসারণের প্রতিলিপন
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন নহে বিদ্যা, নহে ধন হলে প্রয়োজন।
মূলভাব ঃ
প্রকৃতপক্ষে যে জিনিস নিজের নয়, যে বিষয় নিজের আত্মস্থ নয় সে সব নিয়ে অহংকার নিতান্তই মূর্খতা।
সম্প্রসারিত ভাব :
মানুষের জ্ঞানের ধারক ও বাহক হচ্ছে গ্রন্থ। গ্রন্থ পাঠ করে মানুষ তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তর করে, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটায়। নিজের ও অন্যের প্রয়োজনে সেই বিদ্যাকে কাজে লাগায়। বিদ্যার আলোকে জগৎকে উদ্ভাসিত করে। শাশ্বত সত্য-সুন্দরের পথ নির্দেশ করে। কিন্তু বিদ্যা যদি কেবল গ্রন্থগতই হয় তবে তা কোনো কাজেই লাগে না। গ্রন্থগত বা পুঁথিগত বিদ্যা মানুষকে যথার্থ জ্ঞানী করে তুলতে পারে না। বিদ্যাকে জীবনের উপযোগী করে তোলার মধ্যেই এর যথার্থ উদ্দেশ্য নিহিত। কাজেই তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারিক জ্ঞানও থাকা দরকার। বিদ্যা অর্জন করে তাকে কাজে লাগাতে হবে। কেবল মুখস্থ করে লেখাপড়া করলে তা প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায় না। যে জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে কোনো কাজে আসে না সে জ্ঞান দ্বারা নিজেরও যেমন কোনো উপকার হয় না তেমনি জগতেরও কোনো কল্যাণসাধন হয় না। আর যে বিদ্যা প্রয়োজনের সময় কাজে ব্যবহার করা যায় না প্রকৃতপক্ষে সে বিদ্যার কোনো মূল্য নেই। তেমনি মানুষের জীবনে ধন-সম্পদেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ ধন-সম্পদ অর্জনের জন্য প্রয়োজন হয় কঠোর পরিশ্রম। পরের ধন-সম্পদকে নিজের মনে করা কিংবা নিজের ধন-সম্পদ অন্যের কাছে জমা রেখে নিজের বলে হিসাব করা চরম বোকামি। কারণ অন্যের নিকট জমা রাখা ধনসম্পত্তি প্রয়োজনের সময় কাজে লাগানো সম্ভব হয় না। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্যে বিদ্যাকে যেমন আত্মস্থ করতে হবে, ঠিক তেমনি ধন-সম্পদ অন্যের কাছে অহেতুক গচ্ছিত না রেখে নিজের আয়ত্তে রাখতে হবে। যাতে বৃহত্তর মানবকল্যাণে তা কাজে লাগানো যায় তথা দেশ ও দশের মঙ্গলে ব্যবহার করা যায়।
মন্তব্যঃ
গ্রন্থগত বিদ্যা আর অন্যের আয়ত্বে থাকা ধন কোনো প্রয়োজনে আসে না। মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হওয়ার মধ্য দিয়েই এসবের সার্থকতা।
আরো পড়ুন...........
Comments
Post a Comment