দেশের উপকারে নেই যার মন কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন
ভাবসম্প্রসারণ
দেশের উপকারে নেই যার মন
কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন
মূলভাবঃ
নিজের দেশের প্রতি সকলেরই একটা মমতা থাকে। দেশের প্রতি এই মমত্ববোধকে দেশপ্রেম বলে।
হাদীসে আছে, দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। দেশ প্রেমিকের মতে, জন্মভূমি স্বর্গ থেকেও শ্রেষ্ট।
সম্প্রসারিত ভাবঃ
স্বদেশের প্রতিটি ধুলিকণা মানুষের নিকট পবিত্র।
তাই কবি জীবনানন্দদাশ বলেছেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই পৃথিবীর রূপ আমি দেখিতে চাইনা আর।
স্বদেশ ও স্বজাতির উপকার সাধন মানুষের অন্যতম কর্তব্য। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বদেশের উপকার সাধনে দ্বিধাগ্রস্ত, স্বদেশ ও স্বজাতির বিপদে যার প্রাণ কাঁদে না, সে মানুষ হয়েও পশুর সমান।। দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। দেশ সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা নিহিত। যে দেশে মানুষ জন্মগ্রহণ করে, সে দেশের কল্যাণ ছাড়া যে অকল্যাণ চিন্তা করে, সে সত্যিকার মানুষ হতে পারে না। পশু আর তার মধ্যে কোনাে পার্থক্য নেই। মানুষ হয়েও কেউ যদি জন্মভূমির কল্যাণে কাজ না করে, উল্টো স্বদেশের ক্ষতি করে, মা-মাটির বিরুদ্ধে কাজ করে, তবে স্বদেশও একসময় তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সত্যিকার দেশপ্রেমিক মানুষ দেশের মাটি ও মানুষকে নিয়ে সবসময় ভাবে এবং তাদের উপকার সাধনে সে দৃঢ়সংকল্প। কিন্তু যারা আত্মকেন্দ্রিক, কেবল নিজের স্বার্থচিন্তায় বিভাের থাকে, তারা মানুষ নামের কলঙ্ক। দেশপ্রেমহীন বিবেকবর্জিত এ মানুষগুলাে পশুর তুল্য। পশুর যেমন থাকা-খাওয়া ছাড়া অন্য কোনাে চিন্তা থাকে; উপলদ্ধিহীন, বিবেকবর্জিত এ মানুষগুলােও তেমনি।
মন্তব্যঃ
দেশপ্রেমহীন মানুষ তাই পশুর নামান্তর। সত্যিকারের মানুষ হতে হলে অবশ্যই দেশকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালােবাসতে হবে। দেশপ্রেমহীন মানুষ প্রকৃতপক্ষে পশুর সমান।
★একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
দেশের উপকারে নেই যার মন
কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন
মূলভাব:
দেশপ্রেম মানুষের চরিত্রের এক স্বাভাবিক বৈশিষ্ট। দেশপ্রেম হৃদয়ে থাকলেই দেশের মাটি, মানুষ, প্রকৃতি সবকিছুই প্রিয় ও পবিত্র মনে হয়।
মা মাতৃভূমি, মাতৃভাষা প্রত্যেক মানুষের একান্ত আপনার ধন। আর এসবকে যে অবজ্ঞা করে সে কখনো প্রকৃত মানুষের মর্যাদা পায়না। তার মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না।
সম্প্রসারিত ভাব:
মা যেমন সন্তানকে লালন করেন তেমনি নিজের দেশকেও ভালবাসে, বুকে লালিত করেন। মাকে মানুষ যেমন ভালবাসে, তেমনি নিজের দেশকেও ভালবাসে। প্রগাঢ় এই ভালবাসায় মানুষ উপলব্ধি করে,
দেশপ্রেম বিশ্বের প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত একটি গুণ। প্রত্যেক মনীষীই সবার উপরে মাতৃভূমিকে ভালোবাসার স্থান দিয়েছেন। এক দেশ প্রেমিক বলেছেন,” জননী জন্ম- ভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।” অর্থাৎ মাতৃভূমিকে স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন। জন্মের পর হতেই প্রতিটি মানুষের মাঝে নিজের অজান্তেই দেশ প্রেম গড়ে ওঠে। কেননা শৈশব হতে প্রাণের সাথী হয়ে উঠে জন্মভূমি। তাই প্রতিটি মানুষের নিকট জন্মভূমি অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে। স্বদেশের উপকারে দেশকে রক্ষা করার জন্য কতজন যে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তার কোন হিসেব নেই, দেশের জন্য জীবন দিয়ে মানুষ রিক্ত হন না বরং হন তারা ধন্য। তারা কখনো মরেন না। শহীদ হয়ে অমর হয়ে থাকেন। যেমন- অমর হয়ে আছেন রফিক, শফিক, বরকত, সালাম এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর শহীদেরা বাংলাদেশের ইতিহাসে। দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার মানসে সবার জীবন গড়ে তোলা উচিত। স্বদেশের উপকার করতে গিয়ে মনের সংকীর্ণতা দূর করতে হবে। জন্মভূমির মঙ্গল মানুষ মাত্রেই অবশ্য করণীয়। স্বদেশের উপকারে নাই যার মন নেই সে ঘৃণ্য। দেশপ্রেমের উৎস, মনুষ্যত্বের প্রসূতি। যার মধ্যে দেশপ্রেম নেই, স্বদেশের হিতার্থে হিতাকাঙ্খী নয় পশুর চেয়েও অধম। তাকে দিয়ে কোনো মহৎ কাজ সাধিত হয় না। সে মানুষ নয় পশুর সমতুল্য। স্বদেশের সম্মান, স্বাধীনতা, কৃষ্টি, আচার, সভ্যতা, ও ভাষার জন্য যারা জীবন দিতে পারেন তারাই মানুষ। কেননা স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ।
সিদ্ধান্ত:
নিজের দেশকে অবজ্ঞা করে কোনো জাতি কোনোদিন বড় হতে পারেনি। শত দুঃখের মাঝে থেকেও আবার ফিরে আসতে হয়েছে স্বদেশের আঙ্গিনায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য নিজের মাতৃভূমিকে ভালোবেসে তার সমৃদ্ধি সাধনে সচেষ্ট থাকা।
★একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
স্বদেশের উপকারে নাই যার মন
কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন
মূল ভাব :
দেশপ্রেমের ফলে মানুষের মন মহৎ ও উদার হয়। মনের ভিতর স্বদেশের জন্য ভালো কাজ করার উৎসাহ পায়। দেশপ্রেমের মহিমার ফলে জাগ্রত হয় অপরের জন্য কল্যাণ। স্বদেশপ্রীতি যার নেই—সে পশুর সমান।
সম্প্রসারিত ভাব :
কবি মাইকেল মধুসূধন দত্ত স্বদেশ ছেড়ে ইউরোপে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন দেশের মাটি, মানুষ,প্রকৃতি কত যে প্রিয়। তাই বিদেশে অবস্থান কালে তিনি কপোতাক্ষ নদকে উপলক্ষ করে লিখেছিলেন-
সতত হে নদ, তুমি পড় মোর মনে,
সতত, তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে।
মা ও মাতৃভূমির সঙ্গে মানুষের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। আমাদের জন্মভূমি আমাদের দিয়েছে পরম আশ্রয়। এর সুশীতল ছায়ায় আমরা লালিত-পালিত হচ্ছি। এর নদী, জল, ফসলভরা মাঠ, প্রাকৃতিক দৃশ্য মানুষকে হূদয়ের গভীরে টেনে নেয়। সুতরাং স্বদেশের ভালো-মন্দ মানুষকে অবশ্যই ভাবতে হবে। একজন সচেতন মানুষ তার জন্মভূমিকে ভালো না বেসে পারে না। প্রিয় স্বদেশকে ঘিরেই তার অন্তরে রচিত হয় নানা স্বপ্ন। দেশের গৌরবে তার হূদয় আনন্দে ভরে ওঠে, আবার দেশের পরাজয়ে নেমে আসে বেদনার ছায়া। তাই তো দেখা যায় দেশপ্রেমিক মহানবী (সা.)কে শত্রুর অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে তাঁর জন্মভূমি মক্কা নগরী ছেড়ে মদিনায় যাওয়ার সময় গভীর বেদনায় আপ্লুত হতে। আবার কেউ যদি জন্মভূমিকে ভালো না বাসে তবে সে মানুষ নামের অযোগ্য। তাকে পশু বলাই শ্রেয়। কেননা পশুর কোনো দেশ নেই, মানুষের আছে। তাই যুগে যুগে মীর জাফরের মতো ষড়যন্ত্রকারীরা মানুষ নামের অযোগ্য। এ ধরনের মানুষ যতই ধনবান, রূপবান কিংবা জ্ঞানবান হোক না কেন, জন্মভূমির কল্যাণে যদি তার মন না থাকে তাহলে সে নরাধম।
মন্তব্য :
তাই স্বদেশের উপকারে আত্মনিয়োগ করা সবারই পরম কর্তব্য।
আরো পড়ুন.....
Comments
Post a Comment