ভাবসম্প্রসারণ নানান দেশের নানান ভাষা বিনা দেশী ভাষা মিটে কি আশা?
ভাবসম্প্রসারণ
নানান দেশের নানান ভাষা
বিনা দেশী ভাষা মিটে কি আশা?
মূলভাবঃ
সবচেয়ে সহজ এবং সাবলীল ভাষা মাতৃভাষা।মায়ের ভাষা মাতৃভাষা। এই ভাষায় কথা বললে আত্মতৃপ্তি ঘটে, মনে প্রশান্তি পাওয়া যায়। এই ভাষায় কথা বলে যে সুখ পাওয়া যায়, অন্য ভাষায় কথা বলে সে সুখ অসম্ভব।
সম্প্রসারিত ভাবঃ
মাতৃভাষার সুধা মাতৃতুল্য সবচেয়ে সহজ এবং সাবলীল মাতৃভাষা বলে আমরা এই ভাষায় কথা বলে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। অন্য ভাষা যতই মর্যাদা সম্পন্ন হোক না কেন, মায়ের ভাষার সাথে তার কোনো তুলনা হয় না। মনের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আমাদের বাংলা ভাষারই আশ্রয় নিতে হয়। বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রথমে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু করলেও তাঁর রচনা সমাদৃত হয়নি ইংরেজি সাহিত্যে তথা ইংরেজ ভাষাভাষীর হৃদয়ে। যখন বােধােদয় হয় তখন তিনি ভ্রান্ত ধারণা পরিত্যাগপূর্বক লেখেন-
“পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালেমাতৃভাষা রূপখনি, পূর্ণ মণিজালে
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে তার মাতৃভাষা শ্রেষ্ঠ। অন্য ভাষা যতই সহজ হােক না কেন, মাতৃভাষা ছাড়া মনের ভাব উত্তমরূপে আর কোনাে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মাতৃভাষা যে-কোনাে মানুষের অস্তিত্ব ও আত্মপ্রকাশের অবিকল্প একটি বাহন। বিদেশি ভাষায় যতই দক্ষতা অর্জন করুক, মাতৃভাষার ন্যায় এমন সাবলীলভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা বিদেশি ভাষায় সদ্য নয়। মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে মানুষ যতটা স্বাচ্ছন্দ্য বােধ করে এবং আনন্দ পায়, অন্য ভাষায় তা অসম্ভব। কারণ মাতৃভাষার সঙ্গে রয়েছে তার আত্মিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তার আনন্দ-বেদনা, আবেগ-আকাক্ষা, স্বপ্ন-কল্পনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মানুষের অস্তিত্বের মহৎ অবলম্বন। তা দেশ ও জাতির সঙ্গে গড়ে তােলে অবিচ্ছেদ্য সাংস্কৃতিক বন্ধন। মাতৃভাষায় কথা বলে যে আনন্দ, আত্মতৃপ্তি আর প্রশান্তি অনুভব করা যায়, বিদেশি ভাষায় কথা বলে হৃদয়ের সেই তৃষ্ণা কিছুতেই মেটে না। মাতৃভাষাই মানুষের মত প্রকাশের সর্বোত্তম বাহন। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিমূর্ত চেতনা মাতৃভাষার মাধ্যমেই সঠিক প্রতিমূর্তি লাভ করে। বিদেশি ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করে মানুষ খ্যাতি অর্জন করতে পারে কিন্তু মাতৃভাষাই তার অস্তিত্বের আসল পরিচয়।
মন্তব্যঃ
মাতৃভাষার মর্যাদা আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। তানাহলে মাতৃভাষা হারিয়ে যাবে। ভাষা ধ্বংস হলে একটি জাতি ধ্বংস হয়ে যায়। তাই বাঙালি জাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে মাতৃভাষা বাংলাকে আরও সমৃদ্ধ করতে
একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
ভাবসম্প্রসারণ: নানান দেশের নানান ভাষা বিনে স্বদেশি ভাষা পুরে কি আশা?
ভাবসম্প্রসারণ:
পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের ভাষা প্রচলিত। তারপরও মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনাে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করে না। মনের ভাব সুন্দরভাবে সহজে প্রকাশ করতে পারে না। একমাত্র মাতৃভাষা দ্বারাই মনের সূক্ষাতিসূক্ষ্ম ও গভীর ভাবগুলাে সুন্দর, সাবলীল ও যথাযথভাবে প্রকাশ করা যায়। মাতৃভাষার সংযােগ মানুষের হৃদয়ের সাথে।
মানবমনের বিচিত্র অনুভূতি ও আবেগ প্রকাশ পায় ভাষারই মাধ্যমে। এক এক দেশের এক এক জাতি বিভিন্ন ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে। মানুষ প্রয়ােজনে বিদেশি ভাষা শিখলেও সেই ভাষাকে সে অন্তরের গভীরে লালন করতে পারে না। কারণ ছােটবেলা থেকে সে মায়ের মুখে যে বুলি শেখে সেটাই তার মাতৃভাষা বা স্বদেশি ভাষা। এ মাতৃভাষার মাধ্যমে মানুষ তার মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, আবেগ-অনুভূতি যেভাবে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে অন্য ভাষার সাহায্যে সে তা পারে না। মাতৃভাষা মানুষের প্রাণের ভাষা, এ ভাষা জড়িয়ে আছে রক্তের সাথে । মানুষ বিদেশি ভাষায়ও মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্রথমে মাতৃভাষায় অনুধাবন করে নিয়ে তারপর প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু মাতৃভাষার মাধ্যমে মানুষ তার অন্তরের একান্ত অনুভূতিগুলাে যেভাবে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে অন্য কোনাে ভাষা দ্বারা তা সম্ভব নয়।
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিশুর বিকাশ সহজ হয়। শিশুর কচি মনে মায়ের ভাষার প্রভাব বেশি থাকে। যার কারণে তার উপলব্ধি জ্ঞান ও প্রকাশ ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করে। বিদেশি ভাষাতে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না, এমন নয়। তবে মাতৃভাষার মতাে সাবলীল সুন্দর ও আনন্দের সঙ্গে করা যায় না। মা, মাটি ও মাতৃভাষা এক সূত্রে গাঁথা। মাতৃভাষা রক্ষা করার জন্যে বীর বাঙালিরা রক্ত দিতেও দ্বিধা করেনি। তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি।
মাতৃভাষা মানবমনের সম্পূর্ণ আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার সবচেয়ে উপযুক্ত বাহন। তা মনের সকল আবেগ, অনুভূতি, উপলদ্ধিকে সবচেয়ে ভালােভাবে প্রকাশের ক্ষমতা রাখে।
আরো পড়ুন.....
Comments
Post a Comment