'দুঃখের মতাে এত বড় পরশপাথর আর নেই ''||Sadly, there is no such big stone

 ভাবসম্প্রসারণ

''দুঃখের মতাে এত বড় পরশপাথর আর নেই ''||Sadly, there is no such big stone



মূলভাব: 

দুঃখের পরশেই মানুষ সত্যিকার মনুষ্যত্ব লাভ করে। তাই মানুষের জীবনের সকল প্রাপ্তির মূলে দুঃখ পরশপাথরের মতােই কাজ করে।

বড় দুঃখ মানুষের সকল জড়তা ও দৈন্য দূর করে মানুষকে করে তােলে আত্মশক্তিতে বলীয়ান, দুঃখের দহনে জাগ্রত হয় মানবসত্তা এবং জীবন হয় আলােকিত। 


ভাবসম্প্রসারণঃ 


দুঃখের পর সুখ আসে— এটাই পৃথিবীর চিরায়ত নিয়ম । দুঃখের দহনে পুড়েই মানুষ খাটি সােনা অর্থাৎ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। দুঃখ মানুষের সকল দৈন্য দূর করে জীবনকে সার্থক করে তােলে। পরশপাথরের ছোঁয়ায় লােহা যেমন সােনায় পরিণত হয়, তেমনি দুঃখ নামক পরশপাথরের ছোঁয়ায় মানুষের সব গ্লানি দূর হয়ে যায়। মানুষের বিবেক মহান হয়, অন্যের ব্যথায় সে ব্যথিত হয়। যে জীবনে কোনাে দুঃখকষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা নেই, সে জীবন পূর্ণ জীবন নয়। কারণ তার মধ্যে কোনাে সমবেদনার অনুভূতি নেই, দুঃখদারিদ্র্যের সীমাহীন কষ্ট সে বুঝতে পারে না। বিলাসিতায় জীবন অতিবাহিত করলে সঠিকভাবে মনুষ্যত্বের বিকাশ হয় না। জগতের সকল মহান ব্যক্তিরা দুঃখকে জয় করেই সাধনার শীর্ষে আরােহণ করেছেন।

  বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সারাজীবন দুঃখদারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু তবুও তা তাকে নিরাশ করেনি। তিনি লিখেছেন-‘হে দারিদ্র্য, তুমি মােরে করেছ মহান। 

বাংলায় প্রবাদ আছে – কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না। তাই বলিষ্ঠ প্রত্যয়, দৃঢ় মনোেবল দিয়ে দুঃখকে জয় করে সুখ ছিনিয়ে আনতে হবে। সাহসী মানুষ দুঃখকে জয় করার জন্য এমনই পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শান্তির বাণী প্রচার করতে গিয়ে পদে পদে লাঞ্ছিত ও জর্জরিত হয়েছেন মহামানবগণ। তবুও তারা দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে গেছেন মানবজাতির মঙ্গলের জন্যে। এঁরা সবাই দুঃখ নামক পরশপাথরে পুড়ে খাঁটি সােনায় পরিণত হয়েছেন।

মন্তব্য

দুঃখ ও কষ্টের মাধ্যমেই মানুষ জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায় । লাভ করে অনাবিল সুখ ও আনন্দ। তাই দুঃখে ভেঙে না পড়ে তাকে মােকাবিলা করার শক্তি অর্জন করাই হচ্ছে জীবন-সাধনার পূর্বশর্ত।




একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন


মূলভাব : 

পরশ পাথরের স্পর্শে লােহা যেমন খাঁটি সােনায় পরিণত হয়, তেমনি দূঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে মানবজীবন সার্থক হয়ে ওঠে।


সম্প্রসারিত ভাব : 

মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ পাশাপাশি অবস্থান করে। একটির পর অপরটি আসে পর্যায়ক্রমে। তন্মধ্যে সুখের সময় মানুষ ভােগ-বিলাসে জীবন ভাসিয়ে দিলে তাতে আনন্দ পাওয়া যায় সত্য, কিন্তু তাতে জীবনের প্রকৃত স্বরূপ জানা যায় না। দুঃখে পড়ে মানুষ নিজেকে চিনে। নিজের শক্তি-সামর্থ ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দুঃখের মধ্য দিয়েই উপলদ্ধি করা যায়। দুঃখের পরশেই মানুষের জীবন হয় মানবিকবােধে আলােকিত, মানুষ হয়ে ওঠে মহানুভব, মহীয়ান। তাই মানব চরিত্রের পূর্ণ বিকাশের জন্য দুঃখকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ তিতিক্ষা ব্যতীত ব্যক্তি জীবন কিংবা জাতীয় জীবনে সফলতা আসতে পারে না। 

দুঃখের আবেদন চিরন্তন। ইংরেজ কবি জন কীটস্ বলেছেন, “Sorrow is knowledge” -দুঃখবােধই প্রজ্ঞার উৎস। দুঃখবােধ মানুষকে সুষ্টাভিমুখী করে। দুঃখের অনলে পুড়ে মনুষ্যত্ব বিবেক খাঁটি স্বর্ণে পরিণত হয়। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়-“দুঃখই জগতে একমাত্র সকল পদার্থের মূল্য।” মাতৃস্নেহের মূল্য দুঃখে, পতিব্রত্যের মূল্য দুঃখে,  পুণ্যের মূল্য দুঃখে। তাই মহামানবগণ দুঃখকে পরশ পাথররূপে বর্ণনা করেছেন। পরশ মণির সংস্পর্শে লােহা যেমন সােনা হয়, তেমনি দুঃখরূপ পরশ মণির স্পর্শে মানুষের সব মালিন্য নিঃশেষ হয়ে জীবন সার্থকতার মহিমায় প্রােজ্জ্বলিত হয়ে উঠে।


তাই কবির কথায় বলা যায়-

ধন কহে, “দুঃখ তুমি পরম মঙ্গল,

তােমারি দহনে আমি হয়েছি উজ্জ্বল



একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন


মূলভাব:

 দুঃখের স্পর্শে মানুষের মানবীয়সত্তা ও অন্তর্গত শক্তি জাগ্রত হয়। দুঃখের মধ্য দিয়েই মানুষ সত্যিকার মনুষ্যত্ব লাভ করে। দুঃখের পরশেই মানুষের বিবেক পরিশুদ্ধ হয়।

 বা জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে। দুঃখের করুণ দহন শেষে যে সুখ আবির্ভূত হয়, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখের আগুনই মানুষের মনুষ্যত্ব ও বিবেককে খাঁটি সােনায় পরিণত করে। পৃথিবীর সব মূল্যবান সম্পদ কষ্টের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে। দুঃখ ছাড়া প্রকৃত সুখ অর্জন সম্ভব নয়। মনীষীগণ দুঃখকে পরশ পাথরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।পরশ পাথরের ছোয়ায় লােহা যেমন সােনায় পরিণত হয়, তেমনই দুঃখরূপ। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় মানুষের সব গ্লানি দূর হয়ে যায়। ফলে মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা। জগতের সব সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সীমাহীন দুঃখের মর্মান্তিক ইতিহাস। দুঃখ, কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে প্রার্থিত স্বর্ণশিখরে আরােহণ অসম্ভব। সুতরাং জীবনে চলার পথে দুঃখকে সাথে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।


দুঃখ মানুষের সকল জড়তা ও দীনতা দূর করে তাকে সুন্দর করে দুঃখের ভেতর দিয়েই মানুষ জীবন সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে সুতরাং জাগতিক সকল প্রাপ্তির পূর্বশর্ত দুঃখের পরশ।


মন্তব্য : 

জগতের সব সাফল্যের সাথে জড়িত আছে সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের ইতিহাস। তাই কবির কথায় বলা যায়—ধন কহে, “দুঃখ তুমি পরম মঞ্জাল,তােমারি দহনে আমি হয়েছি উজ্জ্বল।”


আরো পড়ুন......




Comments

Popular posts from this blog

রাষ্ট্র বিজ্ঞান কাকে বলে? || রাষ্ট্র বিজ্ঞান কী? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বলতে কি বুঝায়? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও? (What is Political Science?)

চাঁদ শব্দের প্রতিশব্দ/ সমার্থক শব্দ কিকি?

GDP ও GNP কাকে বলে? || GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য কি?