রচনা- সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার || Causes and remedies of road accidents || নিরাপদ সড়ক চাই

রচনা- সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার || Causes and remedies of road accidents || নিরাপদ সড়ক  চাই


সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও     প্রতিকার(Causes and remedies of road accidents)


ভূমিকাঃ

 বর্তমান সমাজে ঘর থেকে বের হলেই প্রত্যেক মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি পদক্ষেপই এই মহামারীকে রুখে দিতে পারে।


সড়ক দুর্ঘটনাঃ

চালক, মালিক,ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার ত্রুটি ও দুর্বলতা জনিত সড়ক কেন্দ্রিক যে দুর্ঘটনা তাই  সড়ক দুর্ঘটনা

বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা: 

বাংলাদেশের তিন ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান-

(ক) সড়ক পথ,

 (খ) নৌপথ এবং 

(গ) আকাশপথ।


 বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা আছে। এছাড়া রয়েছে রেলপথ। রেলপথে ব্রডগেজ, মিটারগেজ এবং ডাবলগেজ এ তিন ধরণের পথই আছে।  এবং প্রায় ৪০ লক্ষ নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে । যাহার মধ্যে প্রায় ১৮ লক্ষ মোটরসাইকেল রয়েছে ।আমাদের পার্শ্ববর্তী অন্য দেশের তুলনাই যানবাহন সংখ্যা অনেক কম । বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হার গবেষনা অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি ১ লক্ষ মানুষের জন্য মাএ  ১ হাজার ১৩৩ টি যানবাহন আছে । বাংলাদেশর প্রতিবেশী দেশ  চীনে ১ লক্ষ জনগনের জন্য ১৮ হাজার যানবাহন , ভারতে ১ লক্ষ জনগনের জন্য ১৩ হাজার যানবাহন , পাকিস্তানে ১ লক্ষ জনগনের জন্য প্রায় ৫ হাজার যানবাহন রয়েছে । এছাড়াও থাইল্যান্ড ,ভিয়েতনাম , ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি দুইজন মানুষের জন্য ১ টি যানবাহন রয়েছে । এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে যানবাহন সংখ্যা কম হলেও সড়ক দুর্ঘটনার মাএ অনেক বেশী । বাংলাদেশে নৌপথ ও আকাশ পথে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যাম হলেও সার্বিক বিবেচনায় সড়ক পথের যোগাযোগ সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানের রয়েছে । এবং সড়ক পথের গুরুত্ব বাংলাদেশর প্রক্ষাপটে অনেক বেশী ।

এছাড়া নৌপথ ও আকাশপথ দেশের অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবিশ্বে যোগাযোাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় সড়কপথের যোগাযোগ সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তাই এই পথের গুরুত্ব অনেক বেশি।

   সড়ক দুর্ঘটনার ধরনঃ

প্রতিদিন সংবাদ পএে , online সংবাদ মাধ্যমে , বিভিন্ন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যাম ও টিভি চ্যানেলে যেসব সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় তাহা বিভিন্ন ভাবে ঘটে থাকে ।

 এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বিভিন্নভাবে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষে। এছাড়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, এমন কি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনা দেখে মনে হয় মৃত্যু যেন ওঁত পেতে বসে আছে রাস্তার অলিতে-গলিতে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণঃ

 নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলো-


  ১) অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং: 

সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং কে দায়ী করা হয়। পুলিশ রিপোর্টেও বলা হয় অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া গাড়ি দ্রুতবেগে ব্রিজে ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস অনেক রয়েছে।

  ২) অপ্রশস্ত রাস্তাঃ 

  বাংলাদেশের অধিকাংশ রাস্তাই অপ্রশস্ত। যার ফলে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। ঢাকা থেকে যাতায়াতের সবচেয়ে ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে। এই রাস্তাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্ত নয়। ফলে এ দুটি পথেই দুর্ঘটনা ও হতাহত বেশি হয়। তাছাড়া দেশের সর্বত্র অপ্রশস্ত রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।


৩) ওভার লোডিংঃ 

  ওভার লোড মানে ধারণক্ষমতার বেশি মাল বহন করা। ফলে চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়।

  ৪) আইন অমান্যঃ 

সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ আইন অমান্য করা। এক জরিপে দেখা যায় ৯১ শতাংশ চালক জেব্রা ক্রসিংয়ে অবস্থানরত পথচারীদের আমলই নেয় না। পাশাপাশি ৮৫ ভাগ পথচারী নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পার হয়। তাছাড়া এক সমীক্ষায় বলা হয় ঢাকা শহরের ৮৪ শতাংশ রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়ম সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।

  ৫) জনসংখ্যার চাপ ও অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থাঃ 

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে প্রতি কিলোমিটারে ২৪৭টির বেশি গাড়ি চলে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আওতাধীন মোট ২২৩.৩০ কিলোমিটার রাস্তায় আনুমানিক গাড়ি চলে ৫ লাখ ৫০ হাজার। অন্যান্য বড় শহরেও অনেকটা একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। ফলে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

  ৬)ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাঃ 

বাংলাদেশে সড়ক পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার। এসব পথে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এই বিশাল যানবাহন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে আনার মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা এদেশে আজও গড়ে ওঠেনি।

  ৭) প্রযুক্তির ব্যবহারঃ 

আধুনিক যুগ সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রযুক্তির ব্যবহার সঠিকভাবে না করলে অনেক সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। গাড়ির চালকরা গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলে, গান শোনে। ফলে অসতর্ক হয়ে পড়েন। এতে করে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

) একজন গাড়ী চালক দীর্ঘক্ষন বিরতিহীন ভাবে গাড়ী চালানো ।

৯) সড়ক ও মহাসড়কে ঝুকিপূর্ণ বাঁক ও রাস্তার বেহাল অবস্তায় সর্তকত ভাবে গাড়ী না চালানো ।

১০) এুটিপূর্ণ  যানবাহন চলাচলে আইনের যথাযত প্রয়োগের অভাব ।

১১) সাধারণত বেশীভাগ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অদক্ষ অযোগ্য ও লাইসেন্সবিহীন চালকের কারণে ।

১২) দায়িত্ব কর্তব্যহীন ভাবে গাড়ী চালানো এবং ওভারটেকিং করার মনোভাব দুর্ঘটনার অন্যতম কারন ।

১৩)রাস্তা সল্পতা এবং ওভারব্রিজ সল্পতা ।সড়কের ওপর অবৈধ্য হাট - বাজার ।

১৪) অসাবধানে রাস্তা পারাপার বা রাস্তা পারাপারের নিয়ম না মানা ।

১৫)অবৈধ স্থাপনা, বিকল্প রাস্তার ব্যবহার না করে যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুড়ি।

১৬)রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা।


এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পথ সভা , পথ অবরোধ , হরতাল ইত্যাদি কারণে  যানজট সৃষ্টির ফলে যানবাহন নিয়ন্তণ কঠিন হয়ে পড়ে ।সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সরকারের সঠিক সিন্ধান্তের সহ অন্যান্য কারণও

রয়েছে ।

  সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতিঃ 

 সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অসীম। এর ফলে কেবল মানুষের মৃত্যু নয়, অপূরণীয় আরো হাজারো ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় জনসাধারণের জীবনে। নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো-

  )-এর হিসাব মতে ২০১০ সালে সারা পৃথিবীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১০ লাখ ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। ২ কোটিরও বেশি মানুষ আহত হয় এবং প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। যা খুবই মর্মান্তিক ও অপ্রত্যাশিত। যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানের তুলনায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

  * বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সালে সারা দেশে ৭০৪৮ জন সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় যার মধ্যে ৩,৭৬৪ জন নিহত ও ৩,২৮৪ জন আহত হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, দুর্ঘটনায় হতাহতের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেক্টর (এআরসি)-এর গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১২০০০ এবং আহত হয় ৩৫,০০০ জন।

  সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুদের ক্ষয়ক্ষতিঃ

 বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)- এর মতে, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৮০ হাজার শিশু মারা যায়। আর আহত হয় হাজার হাজার শিশু যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। ২০১০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৬ শতাংশ শিশু অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ।


  সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ

 বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয় তার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপির দুই ভাগ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর হিসাব মতে আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৫২০ বিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে এর পরিমাণ ৬৫ বিলিয়ন ডলার।

  সড়ক দুর্ঘটনায় পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষতিঃ 

সড়ক দুর্ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এর ফলে হঠাৎ করে বিপর্যয় নেমে আসে একটি পরিবারে। সেই শোক গোটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের বুকে শেলের মতো বিধে থাকে সারা জীবন। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সমাজ ও দেশ হারায় তার কৃতি সন্তানদের। এ দুর্ঘটনা অনেককে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়।

  সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়ঃ 

সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য করণীয়-


- বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং নিষিদ্ধকরণ। আর এ জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেয়া উচিত।

- ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

- লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে।

- লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করতে হবে।

- ফিটনেস, সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো প্রতিরোধ করতে হবে।

- পথচারীকে সতর্কভাবে চলাফেরা করা।

- অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করা।

- মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।

- সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি অর্থাৎ সিআরপিসির ৩০৪ বি ধারায় শাস্তির মেয়াদ ৩ বছর থেকে ১০ বছর করা।

- মোটরযান অধ্যাদেশের ১৪৩, ১৪৬ ও ১৪৯ ধারায় যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ আছে তা বাড়ানো।

- সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনের ভূমিকা আরো বেশি সক্রিয় করা।

- প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা।

- প্রতিটি গাড়ির চালককে স্মরণ রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।


সর্বোপরি সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, গাড়ি চালক সমিতি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।


  সড়ক নিরাপত্তা ও সরকারঃ


 সরকার সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান করে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোট অথরিটি (বিআরটিএ) গঠন করা হয়। এর আগে সড়ক ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ১৯৬১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) গঠিত হয়। এছাড়া গঠিত হয়েছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি) এসব সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ গঠন করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করে চলেছে। 


এছাড়া এর পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সড়ক বা মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১১ জুন দেশের হাইওয়ে সড়কগুলিতে হাইওয়ে পুলিশ নিযুক্ত করা রয়েছে। সরকার এবং এসব সংস্থা যদি সর্বদা সতর্ক থাকে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে।


নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনঃ

 নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের গোড়াপওন হয় ১৯৯০ সালের দিকে । সর্বপ্রথম  চিএনায়ক ইলিয়াস কাজ্ঞন নিরাপদ সড়ক চাই চাই আন্দোলনের শুরু করেন । এতদিন যাব এই আন্দোলন বেগবান হয় নাই । তবে  ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকাই দুইজন কলেজ শিক্ষার্থী বেপরোয়া গাড়ী চালকের কারণে  মৃত্যু হওয়ায় তাদের সহপাঠিরা কার্যকর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ।এবং এই আন্দোলনে  সকল শ্রেণীর মানুষের সমর্থন ছিল । একটা সময় এসে সারা দেশে এই আন্দোলন বেগবান হয়ে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগষ্ট পর্যন্ত চলতে থাকে । পরিশেষে সরকার আন্দোলনের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয় ।


  নিরাপদ সড়ক আইনঃ


 ২০১৮ সালে মন্ত্রীসভায় নিরাপদ সড়ক আইন ২০১৮ খসড়া অনুমাদন করেন । এই আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত বা প্রাণহানি ঘটালে চালকের সর্বউচ্চ ৫ বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে । তবে যদি এই ধরণের মৃত্যু ইচ্ছাকৃত প্রমানিত হলে দন্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে তার বিচার হবে এবং সর্বচ্চো মৃত্যুদন্ড হবে ।


এছাড়াও নির্ধারিত গতিসীমার , অতিরিক্ত গতি বা বেপরোয়াভাবে ঝাঁকিপূর্ণ ভাবে ওভারটেকিং বা ওভারলোডিং বা নিয়ন্তণহীনভাবে  গাড়ী চলানোর মাধ্যমে দুর্ঘটনা করে জীবন বা সম্পত্তির ক্ষতি করলে অনধিক তিন বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে ।

  উপসংহারঃ 

প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ কারোই কাম্য নয়। আমরা সবাই চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। সড়ক দুর্ঘটনা যতো বড় সমস্যা হোক না কেনো সকলের সামগ্রিক চেষ্টা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। যাতে আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। তাই আজ আমাদের স্লোগান হোক ‘নিরাপদ সড়ক চাই।

 

  আর ও পড়ুন.....


Comments

Popular posts from this blog

রাষ্ট্র বিজ্ঞান কাকে বলে? || রাষ্ট্র বিজ্ঞান কী? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বলতে কি বুঝায়? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও? (What is Political Science?)

চাঁদ শব্দের প্রতিশব্দ/ সমার্থক শব্দ কিকি?

GDP ও GNP কাকে বলে? || GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য কি?