আইসিটি (ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি) কি?।।What is information and Communication Technology।।. কৃষিক্ষেত্রে আইসিটি-এর ব্যবহার ও তার গুরুত্ব Usage of ICT in Agriculture and its importance
আইসিটি (ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি) কি?।।What is information and Communication Technology. কৃষিক্ষেত্রে আইসিটি-এর ব্যবহার ও তার গুরুত্ব Usage of ICT in Agriculture and its importance
আইসিটি(ICT)information and Communication Technology:
উপাত্ত (data) প্রক্রিয়াকরণের পর নির্দিষ্ট চাহিদার প্রেক্ষিতে যে সুশৃঙ্খল ফলাফল পাওয়া যায় তাই হলো তথ্য (information)। আর তা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পরিবেশন করাই হলো যোগাযোগ (communication)। সুতরাং তথ্য রাখা এবং তার পরিবেশনই হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT)। বিশদভাবে বললে, কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণএবং এসবের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য কমিউনিকেশন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার এর সাহায্যে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়াই হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির মূল উপাদান হলো কম্পিউটার প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ। এক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে এক কম্পিউটারের সাথে অপরাপর কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক বা যোগাযোগ জাল তৈরি করে মূল তথ্য কেন্দ্র থেকে তথ্য বিভিন্ন গ্রহীতা তথ্য কেন্দ্রে পাঠানো যায়। কম্পিউটার, টার্মিনাল, মডেম, মাল্টিপ্লেকসার ও অন্যান্য প্রসেসর, পিবিএক্স, টেলিফোন লাইন, মাইক্রোওয়েভ সংযোগ, কো-অফিসিয়াল কেবলস, ফাইবার অপটিক্যাল কেবল, যোগাযোগ সফটওয়্যার ইত্যাদি হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
কৃষিক্ষেত্রে আইসিটি-এর ব্যবহার ও তার গুরুত্ব Usage of ICT in Agriculture and its importance
আইসিটি-এর মারফত কৃষকরা তাদের কম্পিউটারের সাহায্যে ঘরে বসেই কৃষি উৎপাদন ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ বিভিন্ন তথ্য ও জ্ঞান লাভ করতে এবং উদ্ভাবিত কলাকৌশল ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে পারে। নিচে বাংলাদেশে আইসিটি-এর ব্যবহার ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ক.বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রে আইসিটিএর ব্যবহার
বাংলাদেশে কৃষকদেরকে কৃষি-উৎপাদন ও কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে আইসিটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছে। নিচে তার বিবরণ দেওয়া হলো:
১। কৃষি তথ্য সার্ভিস: বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ 'কৃষি তথ্য সার্ভিস' প্রতিষ্ঠানটি আইসিটি এর সাহায্যে কৃষকদেরকে কৃষিসংক্রান্ত তথ্য ও প্রযুক্তি জানতে সাহায্য করছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সিনেমা ভ্যানে করে তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদনমূলক কৃষি অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এক্ষেত্রে বিনোদনলাতের সাথে সাথে কৃষকরা কৃষি উৎপাদন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় জানতে পারছে। প্রতিষ্ঠানটির www.ais.govt.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করে তারা কৃষি উৎপাদনের সাথে জড়িত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে পারে।
২। ইন্টারনেট: আজকাল বাংলাদেশের শিক্ষিত কৃষকরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কৃষি-উৎপাদন ও পণ্য বিপণন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় জানতে পারে। কৃষি তথ্য সার্ভিস গ্রাম পর্যায়ে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করে তার মাধ্যমে কৃষি তথ্য হস্তান্তরের ব্যবস্থা করে। এখন দেশে কৃষি তথ্য পাওয়ার জন্য কতগুলো ওয়েবসাইট রয়েছে; এগুলো হলো: (১) www.brri.gov.bd; (২) www.bjri.gov.bd; (৩) www.bsri.gov.bd: (8) www.bina.gov.bd ইত্যাদি। এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষি উৎপাদন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান পেতে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হতে পারে।
৩। টিভি চ্যানেল: কৃষক ও কৃষির উন্নতির জন্য কৃষি তথ্য প্রদানের ব্যাপারে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো যথেষ্ট তৎপর। এ প্রসঙ্গে চ্যানেল আই. এর 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ', বৈশাখীর 'কৃষি ও জীবন', বাংলাভিশনের 'শ্যামল ছায়া', জিটিভির 'সবুজ বাংলা' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকরা স্বচক্ষে কৃষির বিভিন্ন বিষয় অবলোকন করে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগ করতে পারে।
৪। মোবাইল ফোন: বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেও কৃষকরা কৃষিকাজ উপযোগী তথ্য ও পরামর্শ পেতে পারে। মোবাইল ফোনে একটি নির্দিষ্ট নম্বর টিপে তারা কৃষি বিষয়ক যেকোনো সমস্যার সমাধান পেতে পারে। যেমন, মোবাইল কোম্পানি বাংলা লিংক-এর 'জিজ্ঞাসা ৭৬৭৬' নম্বরটি কৃষিসংশ্লিষ্ট সেবাদানের জন্য উন্মুক্তরেখেছে। কৃষকরা গ্রামাঞ্চলে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত কৃষি কল সেন্টারগুলোতে কল করে সরাসরি অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে পারে।
এভাবে দেখা যায়, আইসিটি ব্যবহার করে কৃষকরা সহজেই দেশ ও দেশের বাইরের কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত জানতে এবং তার সাহায্যে সুষ্ঠুভাবে কৃষিকাজ পরিচালনা করতে পারে।
খ. বাংলাদেশের কৃষিতে আইসিটি ব্যবহারের গুরুত্ব
বর্তমানকালে ফলপ্রসূ উপায়ে কৃষিকাজ পরিচালনার জন্য আইসিটি ব্যবহারের বিকল্প নেই। নিচে বাংলাদেশের কৃষিতে আইসিটি ব্যবহারের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১। আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তি: কৃষিকাজে আবহাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময় মতো বীজ বপন, চারা তৈরি ও রোপণ, কীটনাশক প্রয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আগাম আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য জানা একান্ত প্রয়োজন। আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে শস্য ও মৎস্য ক্ষেত্রে কতগুলো পরিপূরক ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়। তাছাড়া, কৃষিকাজ সুষ্ঠুরূপে পরিচালনার জন্য কৃষকদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা ও সমাধান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস ইত্যাদি সম্পর্কেও অবহিত হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার যথেষ্ট ফলদায়ক।
২। উন্নত উপকরণের তথ্য সংগ্রহ: আজকাল কৃষি-উৎপাদনের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য দেশে দেশে উন্নততর বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি উদ্ভাবিত হচ্ছে। এর সাথে রয়েছে নতুন নতুন কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যাপারও। মানসম্মত সর্বাধিক কৃষিফলন পাওয়ার জন্য সর্বোত্তম কৃষি উপকরণ ও টেকসই প্রযুক্তি নির্বাচন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যথার্থ তথ্য দ্রুত পেতে হলে আইসিটির ব্যবহার আবশ্যক।
৩। কৃষি উপকরণসমূহ ব্যবহারের নিয়ম-কানুন: কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সংগ্রহের সাথে সাথে তার ব্যবহারের নিয়মকানুন জানা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় বিষয় সহজেই জানা যায়। ৪। কৃষি-উৎপাদন সর্বাধিক করার ক্ষেত্রে কৃষি-উৎপাদন সর্বাধিক করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ সময়মতো ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে সংগ্রহ করা দরকার। এক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
৫। রোগ-বালাই দমন: নতুন উদ্ভাবিত বীজ ব্যবহার করতে গিয়ে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির আক্রমণে ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। এক্ষেত্রে রোগ-বালাই দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইসিটির ব্যবহার যথেষ্ট সহায়ক।
৬। বিভিন্ন কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন: কৃষিকাজ করে আশানুরূপ ফল পেতে হলে উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন জরুরি। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা পেতে ।
সুতরাং বলা যায়, কৃষিখাতকে অধিক উৎপাদনক্ষম করতে হলে আমাদের কৃষকদেরকে ধীরে ধীরে আইসিটির ব্যবহারে তৎপর হতে হবে।
আরো পড়ুন.....
- অফশোর ব্যাংকিং কাকে বলে?।।what is Offshore banking?।।অফশোর ব্যাংকিং বলতে কি বুঝায়?অফশোর ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা কি?।।what is the advantage and disadvantage of Offshore banking?
- অনুপার্জিত আয় কি?-চিত্রসহ ব্যাখ্যা।।অনুপার্জিত আয় কাকে বলে?।।what is Unearned Income?।।অনুপার্জিত আয়ের কারণ কি?।।what is the reason of Unearned Income?
Comments
Post a Comment