ছয় দফা কি?||ছয় দফার দাবিসূমহ কি কি?||ছয় দফা আন্দোলন কি?||what is six point movement?
ছয় দফা কি?||ছয় দফার দাবিসূমহ কি কি?||ছয় দফা আন্দোলন কি?||what is six point movement?
ছয় দফাঃ
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব শেষে পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তান জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং পাকিস্তানের মোট রপ্তানি আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ রপ্তানি হতো পূর্ব পাকিস্তান থেকে। তবে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আনুপাতিক ছিল না। বছরের পর বছর পূর্ব পাকিস্তান আঞ্চলিকভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হওয়ায় গুরুতর অর্থনীতির দীনতার সম্মুখীন হয়। যার ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় ছয় দফা আন্দোলন।
The six point movement was a movement in East Pakistan, spearheaded by Sheikh Mujibur Rahman, which called for greater autonomy for East Pakistan.
৬ দফা আন্দোলন বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লাগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
স্বায়ত্তশাসনের আড়ালেই মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার নীলনকশা তৈরি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের ওপর দীর্ঘদিনের পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের শিকড়ে আঘাত করে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা যদি ছয় দফা দাবি মেনে নেন, তাহলে পূর্ব পাকিস্তান আর তাদের সঙ্গে থাকবে না।
এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি কনফেডারেশন হবে, এবং সেই কারণেই পশ্চিম পাকিস্তান শুরু থেকেই ছয় দফা প্রত্যাখ্যান করেছে। ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
৬ দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য-পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, ৬ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দিতে হবে। ৬ দফা কর্মসূচির ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়।
৬ দফার দাবিসমূহ
প্রস্তাব - এক : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে;
প্রস্তাব - দুই : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা
কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু'টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা- দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট বিষয়গুলো অঙ্গ রাজ্যগুলিতে ন্যস্ত করা উচিত।
প্রস্তাব - তিন : মুদ্রা ও অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত ২ টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারে।
(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু'টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা
(খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ ও পৃথক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করা উচিত।
প্রস্তাব - চার : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
ফেডারেশনের অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।
প্রস্তাব - পাঁচ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা
ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারাধীন থাকবে।
কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোই মিটাবে।
অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।
শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।
প্রস্তাব - ছয় : আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা
আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
আরো পড়ুন........
- অর্থনীতি কাকে কি?।৷ অর্থনীতি কাকে বলে || what is Economics?|| অর্থনীতির সংজ্ঞা কি?|| Definition of Economics
- রচনা: রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র / ruppoor nuclear power plant. সমস্যা ও সম্ভাবনা
Comments
Post a Comment