রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে -Is as deep as the night , the morning to come to the near.

 রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে 
-Is as deep as the night , the morning to come to the near.

মূলভাব ঃ

বিশ্বসংসারে সকল কিছু একটি নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালিত হয়। প্রাকৃতিক এই নিয়মে দিনের শেষে রাত, রাতের শেষে দিন আসে।

সম্প্রসারিত ভাবঃ

জীবনের চলার পথে আসে অনেক বাধা-বিপত্তি। সেসব বাধাকে অতিক্রম করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বন্ধুর পথ ডিঙিয়ে সফলতার পানে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের লক্ষ্য। অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে সকল বাধা, ভয়কে অতিক্রম করেই করতে হয় সুখের সন্ধান। 


ঠিক তেমনি জীবন চলার পথে দুঃখ-বেদনা আসে। কিন্তু সুখের আগমনে জীবন আবার সজীব হয়ে ওঠে। পৃথিবী বিপরীতমুখী বস্তুর খেলায় প্রতিনিয়ত আবর্তিত। আলো-আঁধার, দিন-রাত, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ ইত্যাদি বিপরীতমুখী অনুষঙ্গ একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রকৃতির এই বন্ধন পৃথিবীকে দিয়েছে টিকে থাকার মন্ত্রণা। একটির অর্বতমানে অপরটির অবস্থান স্পষ্ট হয়। পার্থিব জীবনেও এই সাদৃশ্য লক্ষণীয়। সফলতা-ব্যর্থতা, উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ পর্যায়ক্রমে জীবনে আসে।


আজ যারা সুখে জীবন-যাপন করছেন তাদের সুখ এসেছে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে। এ জগতে কোনো কিছুই স্থায়ী হয় না। নিরবচ্ছিন্ন সুখ কিংবা নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ সাধারণত পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। তাদের পালাবদল ঘটে রাত-দিনের মতোই। রাত যদি দুঃখের প্রতীক হয় তাহলে সুখের প্রতীক হলো দিন। রাতের পর যেমন দিন আসে তেমনি দুঃখের পর আসে সুখ। তবে সুখের সন্ধান পেতে হলে দুঃখকে জয় করতে জানতে হয়। দুঃখ জীবনকে, হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। চলার পথে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।


পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে উদ্যমতার সঙ্গে এসব বাধাকে অতিক্রম করে সুখকে ছিনিয়ে আনতে হয়। দুঃখের অন্ধকার যতই গভীর হোক ধৈর্য, সহিষ্ণুতার মাধ্যমে তা জয় করা সম্ভব।


শিক্ষা: 

দুঃখ দেখে, পরাজয়কে দেখে ভয় পেলে চলবে না। মেধা-মননের সমন্বয়ে সাহসী উদ্যোগে জীবন-চলার পথকে মসৃণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে দুঃখের পরেই সুখ আর আনন্দ জীবনকে ছুঁয়ে যাবে।


একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন


রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে ভাবসম্প্রসারণ


মানবজীবনে দুঃখ যেমন আছে তেমনি দুঃখের কালাে মেঘ ভেদ করে এক সময় দেখা দেয় সুখের সূর্য।

 সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবকিছু নিয়েই মানবজীবন।  কাজেই দুঃখ-দৈন্যে হতাশ না হয়ে, ধৈর্যের সাথে সাধনা করতে হবে সুখ সমৃদ্ধির জন্যে।


সম্প্রসারিত ভাব :

পৃথিবীতে মানুষ নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছে কখনাে দুঃখকে অতিক্রম করার জন্যে, আবার কখনাে সুখের সন্ধানে। আমরা জানি, সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে মানুষের জীবনে। একটানা দুঃখ যেমন মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে, তেমনি একটানা সুখও একঘেয়ে ও বৈচিত্র্যহীন। এ দুটো বিষয় আছে বলেই মানুষ জীবনকে যথার্থভাবে উপভােগ করতে পারছে। যেমন: রাতের পর দিন, আলাের পর অন্ধকার। রাতের ভয়ভীতি দিনের আলােয় দূর হয়, অন্ধকারের পর আলাে মনে প্রফুল্লতা সৃষ্টি করে। কাজে গতি আসে। কোনাে অন্ধকারই চিরস্থায়ী নয়, সাময়িক। তেমনি দুঃখও চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ-যন্ত্রণায় পুড়ে যে সুখ পাওয়া যায় সেটা খাটি সুখ অর্থাৎ প্রকৃত সুখ।


 রাতের আঁধার শেষে একসময় প্রভাতের আলাে দেখা দেয়। এটি যেমন সত্য তেমনি জীবনে দুঃখকে দেখে হতাশ হওয়া উচিত নয়। প্রভাতের মতাে এক সময় সুখ এসে সেখানে উঁকি দেবে । এদের একটির অবস্থান অপরটির বিপরীতে। দুঃখের ভয় আছে বলেই মানুষ তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সাধনা করে সুখের সােনালি প্রভাতের। দুঃখের উপস্থিতিই মানুষকে সুখের মূল্য বােঝায়। তবুও অবুঝ মানুষ চিরসুখের অযৌক্তিক কামনা নিয়ে ভাবে সুখ বুঝি তার দুয়ারে এলাে না। 


মানুষ ভুলে যায় যে, ‘পতঙ্গ আনন্দ বিহারে যতই উর্ধ্বগগনে উড়তে থাকে, তার পতনের মুহূর্তও ততই নিকটবর্তী হয়। দিন আবর্তিত হয় রাতকে ঘিরে, রাত দিনকে ঘিরে তাই রাত যত গভীর হয় ততই প্রভাত এগিয়ে আসে । সুখ-দুঃখ তেমনি এক রহস্য।

মন্তব্যঃ


জীবনে দুঃখ-যন্ত্রণা দেখে কাপুরুষের মতাে মুষড়ে পড়া মােটেই কাম্য নয়। প্রকৃতির নিয়মে রাত দিনের আলােকে গ্রাস করে চিরস্থায়ী হতে পারে না । তেমনি সুখ ও দুঃখও কখনাে চিরস্থায়ী নয়।


একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন


রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে

মূলভাব : 

মানব জীবন যতই দুঃখময় হােক না কেন একপর্যায়ে গভীর অমানিশা কেটে গিয়ে দেখা দেয় প্রভাত সূর্যের রশ্মি, সুন্দর-সুখী ও বিপদমুক্ত বাঞ্ছিত মুহূর্ত।


সম্প্রসারিত ভাব :

বেদনার শেষ সীমায় অবস্থান করে স্বাচ্ছন্দ্যিক জীবনের খেয়া। অন্ধকার রাত্রির প্রহর কেটে দেখা দেয় সােনালি উষা

 মানব জীবন কণ্টকমুক্ত নয়। জীবন চলার পথে সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদ পাশাপাশি অবস্থান করে। ফলে কখনাে সুখ, আবার কখনাে দুঃখ এসে জড়িয়ে যায় জীবনের সাথে। দুঃখ ছাড়া যেমন সুখ কল্পনা করা যায় না, তেমনি জীবনে শুধু দুঃখ থাকে তাও ভাবা নিরর্থক। । তাই দুঃখের আঁধারে জীবন ঢেকে গেলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ দুঃখের পর একসময় সুখ আসতে বাধ্য। রাত যত গভীর হয় ততই তা দিনের সান্নিধ্যে আসে- এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তেমনি দুঃখ-বেদনা, বিপদ-আপদ যতই গভীর থেকে গভীরতর হয় বুঝতে হবে সুখের সােনালি প্রভাত ততই নিকটে। 

মন্তব্য : 

জীবনের পাশাপাশি মৃত্যুর আহ্বান যেমনি অমােঘ সত্য, তেমনি সুখ-দুঃখ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িতএকটিকে বাদ দিয়ে অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা মিথ্যা মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়।


একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন


রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে

মূলভাব : 

সূর্য অস্ত যাবার পর থেকে সন্ধ্যা শুরু হয়। সন্ধ্যা হতে হতে রাত হয় এবং রাত গভীর থেকে আরও গভীরতর হয়। তারপরেই ধীরে ধীরে গভীরতা কমতে থাকে, সূর্য ওঠে, সকাল হয়। প্রভাত বা সকালকে কাছে আসতে গেলে আমাদেরকে গভীর রাতের এই সময়টুকু পেরোতেই হবে। রাত গভীর হতে হতে ধীরে ধীরে গভীরতা কমতে থাকে যখন সূর্য উদয় হয়।


সম্প্রসারিত ভাব :

 বার্নার্ড জোসেফ বলেছেন, “এমন কোনাে রাত নেই যার ভাের হবে না। এমন কোনাে দুঃখ নেই যা সময়ে ফিকে হয়ে আসবে না


এই অন্ধকার গভীর রাতের সঙ্গে আমাদের একটা ভয় জড়িয়ে আছে কারণ অন্ধকারকে আমরা দেখতে পাই না।আমরা অপেক্ষায় থাকি কখন এই গভীর রাত কেটে গিয়ে ভোরের আলো দেখতে পাবো।


আমাদের জীবনে যত বড় বড় সমস্যা আসুক না কেন সে সমস্যার একটা সমাধান অবশ্যই আছে। আমরা যত সমস্যার মুখোমুখি হই না কেন, জীবনে যত অন্ধকার সময় আসুক না কেন একসময় তার শেষ হবেই। আর এই শেষ থেকেই নতুন জীবনের শুরু। জীবনের এই সমস্যা কে আমরা ওই গভীর রাতের সঙ্গে তুলনা করছি। গভীর রাতের পরে যেমন আমরা ভোর দেখতে পাই এটাও ঠিক তেমনি।

নতুন ভোর দেখার জন্য যেমন রাতের গভীর সময়টুকু আসতে বাধ্য, আবার চলে যেতেও বাধ্য। জীবনের সমস্যাগুলো ঠিক তেমনি , সময়ের নিয়মে এগুলো যেমন আসে তেমন চলেও যায়।

ঠিক একইরকম অর্থের একটা সুন্দর লাইন আমরা একটি বিখ্যাত গানে পাই—


"যতই বড় হোক রাত্রি কালো জানবে ততই কাছে ভোরের আলো / যদি একলা পথে কোনো সাথী না মেলে, যদি সাড়া নাহি পাও,সাড়া দেবে তব প্রাণ।


আরো পড়ুন..... 

Comments

Popular posts from this blog

রাষ্ট্র বিজ্ঞান কাকে বলে? || রাষ্ট্র বিজ্ঞান কী? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বলতে কি বুঝায়? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও? (What is Political Science?)

চাঁদ শব্দের প্রতিশব্দ/ সমার্থক শব্দ কিকি?

GDP ও GNP কাকে বলে? || GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য কি?