মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান বা ফাঁক কি?(What is Inflantionary gap?) || মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান উৎপত্তির কারণ কি?(What is the Causes of Inflantionary gap)?
মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান বা ফাঁক কি(What is Inflantionary gap):
মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান বা ফাঁক:
লর্ড কেইনস “ মুদ্রাস্ফীতির ফাঁক ” ধারণার প্রবক্তা । কেইনস তার How to pay নামক পুস্তকে সর্বপ্রথম ইহা ব্যাখ্যা করেন । মুদ্রাস্ফীতির ফাঁককে কেহ সরকারি ব্যয় ও সমাজে প্রাপ্ত প্রকৃত সম্পদের প্রেক্ষিতে পর্যালােচনা করেছেন । আবার কোন কোন অর্থনীতিবিদ একে সামগ্রিক যােগানের উপর অতিরিক্ত চাহিদার আলােকে ব্যাখ্যা করেছেন । কে কে কুরিহারা , অধ্যাপক ফ্লেইন প্রভৃতি অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতির ফাঁক নিয়ে পর্যালােচনা করেছেন ।
মুদ্রাস্ফীতির ফাঁক এমন অবস্থা নির্দেশ করে যখন চলতি মূল্যে পূর্ণনিয়ােগ স্তরের মােট উৎপাদনের চেয়ে সামগ্রিক ব্যয় বেশি হয় ।
কেইনসের মতে “ ভিত্তি বছরের দামে যে দ্রব্য সামগ্রি পাওয়া যায় তা অপেক্ষা সম্ভাব্য ব্যয়ের বাড়তিটুকুই হল মুদ্রাস্ফীতির ফাঁক ।অর্থাৎ সমাজের মােট ব্যবহার যােগ্য আয় এবং ভিত্তিমূলক দামস্তরে ভােগ্য পণ্যের মােট দামের মধ্যে যে ব্যবধান তাহাই হল মুদ্রাস্ফীতি ফাঁক ।
১৯৪১ সনে ব্রিটেনের চ্যানােলর অভ দি এক্স চেকার তার বাজেট বক্তৃতায় “ মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান কথাটি ব্যবহার করেন । তার বক্তব্য অনুসারে “ সরকারি ব্যয়ের অতিরিক্ত সেই অংশকে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান বলে যার সাথে সংগতি রেখে সমাজের অন্যদের দ্বারা মানবীয় যা বস্তুগত প্রকৃত সম্পদের বৃদ্ধি ঘটেনি ।
চিত্র:
চিত্র বিশ্লেষণ:
Ox অক্ষে জাতীয় আয় এবং OY অক্ষে ব্যয়ের পরিমাণ দেখান হয়েছে । OY রেখা 45° অর্থাৎ আয় ও ব্যয় এ রেখায় সমান । C + I রেখা ভােগ ও বিনিয়ােগ ব্যয় দেখাচ্ছে । F হল পূর্ণ নিয়ােগস্তর অর্থাৎ এখানে জাতীয় ব্যয় জাতীয় সম্পদ পূর্ণ ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত । F বিন্দুর উপরে দ্রব্যের যােগান বৃদ্ধি সম্ভব নয় । এজন্য এর উপর ব্যয় করলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় । C ' + I' রেখা এ বিন্দুর উপরে অবস্থিত । অর্থাৎ জাতীয় ব্যয়ের স্তর ও পূর্ণনিয়ােগ স্তরের পার্থক্য FG পরিমাণ হল মুদ্রাস্ফীতি ফাঁক ব্যবধান ।
মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান উৎপত্তির কারণ:
একটি দেশে সাধারণত নিম্নোক্ত কারণে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধানের উৎপত্তি হয়-
● প্রথমত , অর্থনীতিতে পূর্ণনিয়ােগ অর্জিত হলে উৎপাদন বা যােগান বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা থাকে না । আর পূর্ণনিয়ােগ অর্জিত না হলেও বিশেষ কোন কারণে যােগানের ক্ষেত্রে অস্থিতিস্থাপকতা দেখা দিতে পারে । সমাজের সামগ্রিক চাহিদা যদি সমাজের সামগ্রিক যােগান অপেক্ষা বেশি হয় , তবে মুদ্রাস্ফীতির ব্যবধান দেখা দেয় ।
●দ্বিতীয়ত , উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়ােজন । তখন সরকারি ব্যয় বাড়লে জনগণের হাতে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে । স্বাভাবিকভাবেই আপাতদৃষ্টে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে , ভােগ্য দ্রব্যের চাহিদাও বাড়ে । এজন্য কিন্তু উৎপাদন এত দ্রুত বাড়ে না । ফলে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে দামস্তরের বৃদ্ধি স্বাভাবিক । কাজেই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় উৎপাদন আপেক্ষিকভাবে অস্থিতিস্থাপক হওয়ায় দামস্তর বাড়ে , অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতির ব্যবধান দেখা দেয় ।
●তৃতীয়ত , সুতরাং চাহিদা বৃদ্ধি অস্থিতিস্থাপক যােগান , অতিরিক্ত উন্নয়ন ব্যয় , যুদ্ধ ব্যয় ইত্যাদি কারণে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান সৃষ্টি হতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতি ফাঁক বলতে কী বোঝ?
ReplyDelete