কৃষির সংজ্ঞা?।।কৃষি কাকে বলে।।What is agriculture৷। বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য।।Characteristics of agriculture in Bangladesh
কৃষির সংজ্ঞা?।।কৃষি কাকে বলে?।।What is agriculture?।। বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য।।Characteristics of agriculture in Bangladesh.
কৃষির সংজ্ঞা:
সাধারণ অর্থে জমি চাষ করে ফসল উৎপাদন করাকে কৃষি বলে। তবে আধুনিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে কৃষি হল এমন এক ধরণের সৃষ্টি সম্বন্ধীয় কর্ম যা ভূমি কর্ষণ, বীজ বপন, শস্য উদ্ভিদ পরিচর্চা, ফসল কর্তন ইত্যাদি থেকে শুরু করে উৎপাদিত দ্রব্য বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থনীতির আলোচনায় পশু-পালন থেকে শুরু করে শস্য উৎপাদন, বনায়ন, খনিজ ও মৎস্য সম্পদ আহরণ প্রভৃতি সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ প্রক্রিয়াকে কৃষির অন্তভুক্তি করা হয়।
বাংলাদেশে কৃষিকে তিনটি উপখাতে বিভক্ত করা হয়।
যথা- ১) শস্য, ২) বনজ সম্পদ, ৩) প্রাণি সম্পদ।
পূর্বে মৎস্য সম্পদও একটি উপখাত হিসেবে কৃষি খাতের অর্ন্তভুক্ত ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের হিসেবে মৎস্য উপখাতকে একটি পৃথক খাত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য:
বাংলাদেশ কৃষি ভিত্তিক দেশ হলেও এখনও চাষাবাদ মূলত: জীবনধারণ কেন্দ্রীক। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু হয় নি বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সবে মাত্র শুরু হয়েছে।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল:
১. একর প্রতি উৎপাদন কম: যান্ত্রিক সভ্যতার যুগেও বাংলাদেশে এখনও অনেক ক্ষেত্রে পুরাতন পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। উন্নত মানের বীজ এবং সার ও কীটনাশকের ব্যবহার অপ্রতুল। চাষের জমিতে পানি সরবরাহের জন্য এ দেশে কৃষকেরা এখনও প্রকৃতির উপর কিছুটা নির্ভরশীল। একর প্রতি জমির উৎপাদন পর্যাপ্ত নয়। এই উৎপাদন উন্ন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও কম।
২. ভূমিহীন কৃষক: বাংলাদেশের ৫০ শতাংশেরও অধিক কৃষক পরিবার কার্যত ভূমিহীন। তারা অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে। এই সমস্ত ভূমিহীন কৃষকেরা স্বাভাবিকভাবেই কৃষিকাজে তেমন উৎসাহ বোধ করে না। আমাদের দেশে,বিশেষ করে গ্রামে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৩. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষিজোত: বাংলাদেশের কৃষি জমি গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বিভক্ত। ফলে, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষি কাজ করা আমাদের দেশে কঠিন। এটি আমাদের কৃষি-ফলনের স্বল্পতার অন্যতম কারন।
৪. জীবন ধারনের জন্য চাষ: আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য উন্নত দেশের কৃষি কার্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষি কার্য জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। খুব কম কৃষক পরিবারই ভরনপোষণের জন্য প্রয়োজনীয় শস্যের অতিরিক্ত শস্য উৎপাদন করে থাকে।
৫. অনাবাদী জমি: আমাদের দেশে যে পরিমান চাষযোগ্য জমি আছে তার সবটা এখনও চাষাবাদ হয় না। এছাড়া উপযুক্ত সেচ ও পানি নিষ্কাশনের অভাবে বাংলাদেশে এখনও বহু জমি চাষের অযোগ্য রয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পানি সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে এ সমন্ত জমি সহজেই চাষের অধীনে আনা যায়।
৬. ছদ্মবেশী বেকারত: বাংলাদেশের কৃষিতে ছদ্মবেশী বেকারত্ব প্রকট। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিকল্প- নিয়োগের অভাবে বাংলাদেশের কৃষিতে প্রয়োজনাতিরিক্ত লোক এসে ভীড় করছে। এ সমস্ত অপ্রয়োজনীয় জনগনকে আপাত দৃষ্টিতে কর্মে নিয়োজিত মনে হলেও তারা কার্যত বেকার। বাংলাদেশে কৃষিতে এরূপ ছদ্মবেশী বেকারত্বের পরিমাণ প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ এবং এ কারণে আমাদের কৃষকের মাথাপিছু আয় কম।
৭. কৃষিপণ্যের নিম্নমান: আমাদের কৃষিপণ্যের মান উন্নত নয়। এ কারণে বিদেশের বাজারে আমাদের কৃষিজাত পণ্য সুনাম অর্জন করতে পারছে না।
৮. দরিদ্র ও স্বাস্থ্যহীন কৃষক: আমাদের দেশের কৃষকেরা গরীব। পর্যাপ্ত খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অভাবে তারা হীনবল ও স্বাস্থ্যহীন। কৃষকের দারিদ্র্যতা এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তির অভাব আমাদের কৃষি উন্নয়নের পথে অন্তরায়।
৯. জমির অনুপস্থিত মালিকানা: বাংলাদেশের অনেক কৃষি জমির মালিক শহরে বাস করে। তারা নিজেরা কৃষি জমির তদারক করে না। ফলে জমির উৎপাদন কম হয়।
১০. কীট-পতঙ্গের উপদ্রব: কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
১১. বর্গাচাষ পদ্ধতি: বাংলাদেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ জমি বর্গাচাষের আওতায় রয়েছে।৮. দরিদ্র ও স্বাস্থ্যহীন কৃষক: আমাদের দেশের কৃষকেরা গরীব। পর্যাপ্ত খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অভাবে তারা হীনবল ও স্বাস্থ্যহীন। কৃষকের দারিদ্র্যতা এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তির অভাব আমাদের কৃষি উন্নয়নের পথে অন্তরায়।
১২. খাদ্যশস্যের প্রাধান্য: আমাদের কৃষিতে খাদ্যশস্যের প্রাধান্য রয়েছে। নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মিটানোর পর অবশিষ্ট জমিতে এ দেশের কৃষক অর্থকরী ফসল চাষ করে। ফলে আমাদের কৃষিতে অর্থকরী ফসলের উৎপাদন কম।
আরো পড়ুন......
Comments
Post a Comment