বাজার কাকে বলে? বাজারের সংজ্ঞা?।। What is the definition of a market??।।বাজারের প্রকারভেদ।। বাজার কত প্রকার ও কি কি।।Classification of Market?
বাজার কাকে বলে? বাজারের সংজ্ঞা?।। What is the definition of a Market??।।বাজারের প্রকারভেদ।। বাজার কত প্রকার ও কি কি?।।Classification of Market?
বাজার (Market):
সাধারণ অর্থে
বাজার বলতে একটি নির্দিষ্ট স্থানকে বোঝায় যেখানে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে
দ্রব্যসমাগ্রী ক্রয় বিক্রয় হয় । কিন্তু অর্থনীতিতে বাজার শব্দটির অর্থ ভিন্ন।
অর্থনীতিতে বাজার বলতে একটি পণ্য তার ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষির মাধ্যমে
নির্ধারিত দামে ক্রয় বিক্রয় হওয়াকে বোঝায় । যেমন , পাটের বাজার , গমের বাজার ,
সোনার বাজার ইত্যাদি । পাটের বাজার বলতে পাট বিক্রয়ের কোন নির্দিষ্ট স্থানকে নয়
, বরং এক বা একাধিক স্থানে ছড়িয়ে থাকা পাটের ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে দর
কষাকষির মাধ্যমে একটি নির্ধারিত দামে পাটের ক্রয় বিক্রয়কে বোঝায় ।
বাজারের সংজ্ঞা
দিতে গিয়ে ফরাসি অর্থনীতিবিদ কুর্নট ( Cournot ) বলেন ,
"বাজার
শব্দ দ্বারা অর্থনীতিবিদগণ দ্রব্যসমাগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের কোন বিশেষ স্থানকে বোঝান
না । বরং যেকোন সমগ্র অঞ্চলকে বোঝান যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতারা পরস্পরের মধ্যে এমন অবাধ আদান প্রদান করে যাতে দ্রব্যের
দাম সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে সমান হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় । "
অধ্যাপক
চ্যাপমান বলেন ,
"অর্থনীতির
দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে ব্যাখ্যা করলে বাজার বলতে কোন স্থানকে বোঝায় না , বরং এক
বা একাধিক দ্রব্যকে বোঝায় যা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রতিযােগিতার
মাধ্যমে ক্রয় - বিক্রয় হয়"
এ সংজ্ঞাগুলো
বিশ্লেষণ করলে
অর্থনীতিতে
বাজারের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়
এগুলো হল :
১.ক্রয়
বিক্রয়যাগ্যে একটি বা একাধিক দ্রব্য
২.দ্রব্যটির
একদল ক্রেতা ও বিক্রেতা ।
৩.দ্রব্যটি
ক্রয় বিক্রয়ের এক বা একাধিক অঞ্চল ।
৪.ক্রেতা ও
বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দামের উদ্ভব ।
এসব বৈশিষ্ট্যের আলোকে বলা যায়, কোন দ্রব্যের ক্রয় বিক্রয় নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতার ফলে একটি নির্দিষ্ট দামের উদ্ভব হলে অর্থনীতিতে তাকে বাজার বলে।
বাজার প্রকারভেদ ঃ
অর্থনীতিতে বাজার বলতে কোনো দ্রব্যের
ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি
সুনির্দিষ্ট দামে ক্রয়-বিক্রয়কে বোঝায়। বাজার কত প্রকার সে সম্পর্কে বিভিন্ন
অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করেছেন। অর্থনীতিবিদদের মত
অনুসারে বাজার তিন প্রকার। যথা-
ক. আয়তনের ভিত্তিতে বাজার,
খ. সময়ের ভিত্তিতে বাজার ও
গ. প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজার।
নিম্নে এগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলো-
আয়তনের ভিত্তিতে বাজার
আয়তনের ভিত্তিতে বাজারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. স্থানীয় বাজার (Local Market),
২. জাতীয় বাজার (National Market) ও
৩. আন্তর্জাতিক বাজার (International Market)
১. স্থানীয়
বাজার (Local Market)
যদি একটি দ্রব্য বিশেষ একটি এলাকায়
ক্রয়-বিক্রয় হয় অর্থাৎ একটি বিশেষ এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এরূপ বাজারকে স্থানীয়
বাজার বলে। যেমন- শাকসবজির বাজার, মাছের বাজার, দুধের বাজার ইত্যাদি।
২. জাতীয় বাজার (National Market)
যদি একটি দ্রব্য দেশব্যাপী ক্রয়-বিক্রয়
হয়; কিন্তু বিদেশে রপ্তানি করা হয় না। অর্থাৎ দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় দেশের মধ্যে
সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এরূপ বাজারকে জাতীয় বাজার বলে। যেমন- কোনো দেশে প্রস্তুত
বস্ত্র, আসবাবপত্র, প্রসাধনী ইত্যাদির বাজার।
৩. আন্তর্জাতিক বাজার (International
Market)
যদি কোনো দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় শুধু
দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্রয়-বিক্রয় হয়, তবে সেসব
দ্রব্যের বাজারকে আন্তর্জাতিক বাজার বলে। যেমন- বাংলাদেশের পাট, মধ্যপ্রাচ্যের তেল, স্বর্ণ ইত্যাদির
বাজার।
সময়ের ভিত্তিতে বাজার
সময়ের ভিত্তিতে বাজারকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. অতি স্বল্পকালীন বাজার (Very Short
Period Market),
২. স্বল্পকালীন বাজার (Short Period
Market),
৩. দীর্ঘকালীন বাজার (Long Period
Market) ও
৪. অতি দীর্ঘকালীন বাজার (Very Long
Period Market) ।
১. অতি স্বল্পকালীন বাজার (Very Short Period Market)
অধ্যাপক আলফ্রেড মার্শালের মতে, যে বাজারের স্থিতিশীলতা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন, সে
বাজারকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলে। এ বাজারে চাহিদা সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক হয়।
এরূপ বাজারে সহজে যোগান বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস করা যায় না। এ বাজারে চাহিদা দ্বারাই
দাম নির্ধারিত হয়। দুধ, মাছ, মাংস, শাকসবজি প্রভৃতির বাজারকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলে।
২. স্বল্পকালীন বাজার (Short Period Market)
স্বল্পকালীন বাজারের স্থায়িত্ব কয়েক মাস
হতে পারে। স্বল্পকালীন বাজারে চাহিদা অনুযায়ী যোগান বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস করা যায়
না। তবে এরূপ বাজারে যোগানের পরিমাণ সামান্য কিছু বৃদ্ধি অথবা হ্রাস করানো যেতে
পারে। কুটির শিল্পভিত্তিক উৎপাদিত দ্রব্য যেমন লুঙ্গি, গামছা, চাদর ইত্যাদি স্বল্পকালীন
বাজারের অন্তর্গত।
৩. দীর্ঘকালীন বাজার (Long Period Market)
দীর্ঘকালীন বাজারের পরিধি এক বছর বা
কয়েক বছর হতে পারে। তাই চাহিদার বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে তাল মিলিয়ে শিল্পে উৎপাদিত
দ্রব্যের বৃদ্ধি বা হ্রাস সম্ভব হয়। এরূপ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে নতুন
শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে যোগান বা সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারে। এ বাজারে চাহিদা ও
যোগান উভয়ই দামের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
৪. অতি দীর্ঘকালীন বাজার (Very Long Period Market)
অতি দীর্ঘকালীন বাজার কয়েক বছর হতে এক
যুগের বেশি সময় হতে পারে। নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলেও মানুষের উন্নত
জ্ঞানের সমন্বয়ে উন্নত ও রুচিমাফিক দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন সম্ভব হয়। এরূপ বাজার
ক্রেতার রুচি, পছন্দ, অভ্যাস, জ্ঞান, জনসংখ্যা ইত্যাদি দ্বারা প্রভাব বিস্তার করে।
প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজার
দ্রব্যের গুণাগুণ ও ক্রেতা-বিক্রেতার
সংখ্যার ভিত্তিতে বাজারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার
(Perfect Competition Market) ও
২. অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার (Imperfect Competition Market) ।
১. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক
বাজার (Perfect Competition Market)
যে বাজারে ক্রেতার সাথে ক্রেতার,
বিক্রেতার সাথে বিক্রেতার এবং ক্রেতার সাথে বিক্রেতার পূর্ণমাত্রায় প্রতিযোগিতা
থাকে, তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যখন
পূর্ণ প্রতিযোগিতা বিরাজ করে, তাকেই পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলা হয়। পূর্ণ
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বহুসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতা একই রকম দ্রব্যসামগ্রীর জন্য
দরকষাকষি করে বিশেষ একটি দামে মতৈক্যে আসে। যেকোনো বিক্রেতা ইচ্ছা করলে বাজারে প্রবেশ করতে
পারবে বা ইচ্ছা করলে বাজার ত্যাগ করতে পারবে।
২. অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার (Imperfect Competition Market)
যে বাজারে এক বা একাধিক কিন্তু অসংখ্য
নয়, ক্রেতা ও বিক্রেতা অসম প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে, তাকে
অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার পূর্ণ
প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বিপরীত। অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। দ্রব্যসামগ্রীর গুণাগুণও এক রকম নয়। এছাড়া বিক্রেতা
বিভিন্ন ক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্ন দাম নিতে পারে। এরূপ বাজারে প্রচুর মুনাফা অর্জন
করা যায়।
অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার আবার
কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন-
i. একচেটিয়া বাজার (Monopoly Market),
ii. ডুয়োপলি বাজার (Duopoly Market),
iii. অলিগোপলি বাজার (Oligopoly Market),
iv. একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতার বাজার
(Monopolistic Competition Market),
V. দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজার (Bilateral Monopoly Market),
vi. মনোপসনি বাজার (Monopsony Market),
vii. ডুয়োপসনি বাজার (Duopsony Market),
viii. অলিগোপসনি বাজার (Oligopsony
Market)।
আরো পড়ুন........
Comments
Post a Comment