বাংলার সংস্কৃতি।। Culture Of Bengal ।। বাংলার সংস্কৃতিক ঐতিহ্য।।Culture ‍and Tradition Of Bengal

                                 

            বাংলার সংস্কৃতি।। Culture Of Bengal ।। বাংলার সংস্কৃতিক ঐতিহ্য।।Culture ‍and Tradition Of Bengal

ভূমিকা: 

সংস্কৃতি প্রবহমান নদীর মতোএর রূপান্তর আছে, মৃত্যু নেই। মানুষের জীবনচর্চা ও চর্যার বৈচিত্র্যময় সমন্বিত রূপই সংস্কৃতি। সামাজিক মানুষের জীবনযাপন-পদ্ধতি, ধারাবাহিক ঐতিহ্য, প্রজন্ম-পরম্পরা আচার-বিশ্বাস-প্রথা, ভূয়োদর্শন, ভাব-ভাবনা, নীতি-নৈতিকতা, উৎপাদন-উদ্ভাবনএই সবই সংস্কৃতির মৌল উপকরণ। এই সবই সংস্কৃতির মৌল উপকরণ। প্রত্যেক দেশ বা জাতির একটি নিজস্ব সংস্কৃতি আছে।সংস্কৃতির পরিসর-পরিধি বিশাল ও ব্যাপক। এই সংস্কৃতির মাধ্যমেই জাতীয় জীবনকে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেক দেশ ও জাতি তাদের নিজস্ব পরিচয় ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে। তাই কোনো একটি নির্দিষ্ট ছকে-বাঁধা সংজ্ঞা-সূত্রে একে সীমাবদ্ধ করা চলে না। মূলত একটি জাতির ইতিহাস, জীবন প্রণালী, ভাষা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, চিন্তাভাবনা, শিল্পকলা, সাহিত্য সব কিছুই তার জাতীয় সংস্কৃতির অন্তর্গত। 

সংস্কৃতি

সংস্কৃতির খাঁটি বাংলা হচ্ছে কৃষ্টি। যার অর্থ হলো কর্ষণ বা চাষ। সংস্কৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Culture’ বা কালচার। বাংলায় এটিকে সংস্কৃতি বা কৃষ্টি বলে। এটি বুৎপত্তিগতভাবে ল্যাটিন শব্দ ‘Colere’ থেকে এসেছে যার অর্থ হল – কর্ষণ করা বা উৎপাদন করা। সংস্কৃতির ইংরেজি রূপ Culture শব্দটি ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম ব্যবহার করেন ফ্রান্সিস বেকন ষালো শতকের শেষ দিকে। সংস্কৃতি সনাক্তকরণের কোনো নির্দিষ্ট মানদ-, বৈশিষ্ট্য ও গন্ডি নেই।

সংস্কৃতির দুটি অর্থ পরিলক্ষিত হয় যথা –

i) সংকীর্ন অর্থ – সংকীর্ণ অর্থে বা সাধারণ অর্থে সংস্কৃতি হলো শিক্ষা বা চর্চা দ্বারা লব্ধ বিচারবুদ্ধি বা বিদ্যাবুদ্ধি, শিল্পকলা, রীতিনীতি, রুচিবোধ প্রভৃতি

ii)ব্যাপক অর্থ– ব্যাপক অর্থের সংস্কৃতি হল পার্থিব দিক এবং আধ্যাত্মিক দিক। এছাড়া ব্যাপক অর্থে সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

 সমাজবিদ North বলেছেন – সংস্কৃতি হল মানুষের তৈরি সেই সব উপায়, যা তার প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন শিক্ষা হলো হল হীরক এবং সংস্কৃতি হল তার দ্যুতি বা দীপ্তি।

সমাজতত্ত্ববিদ Jones বলেন, “মানুষ যা সৃষ্টি করে তার সামগ্রিক রূপই হচ্ছে সংস্কৃতি।” নৃবিজ্ঞানী E.B.Tylor বলেন, “সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত আচার-আচরণ, ব্যবহার, জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতি-প্রথা, আইন ইত্যাদির জটিল সমাবেশই হলাে সংস্কৃতি।” 

সংস্কৃতি (বা কৃষ্টি) হলো সেই জটিল সামগ্রিকতা যাতে অন্তর্গত আছে জ্ঞান, বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিল্প, আইন, রাজনীতি, আচার এবং সমাজের একন সদস্য হিসেবে মানুষের দ্বারা অর্জিত অন্য যেকোনো সম্ভাব্য সামর্থ্য বা অভ্যাস।

 বাংলার সংস্কৃতির উদ্ভব

আর্য জাতির মানুষরা ভারতে আসার আগে পূর্ব ভারতের সমভূমি ও অরণ্য অঞ্চলে বাস করত আদি-অস্ত্রাল গোষ্ঠীর মানুষরা। আর্যরা আসার পর দুই সংস্কৃতির মিলনে গড়ে ওঠে অন্য এক মিশ্রসংস্কৃতি। যেহেতু আদি-অস্ত্রালরা ছিল বাঙালিদের পূর্বপুরুষ, সেহেতু বলা চলে বাংলার সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছিল অনার্য, আদি-অস্ত্রাল এবং আর্য জাতির সংস্কৃতির মিশ্রণের ফলে।

বাংলার সংস্কৃতির বিকাশ

অনার্য (আদি-অস্ত্রাল) জাতি এবং আর্য জাতির মিশ্রণ থেকে শুরু করে বর্তমানকাল পর্যন্ত বাংলার সংস্কৃতির নানান পর্বে বিকাশ লাভ করেছে। যেমন-

(ক) আদি যুগে বাংলার সংস্কৃতি

বাঙালি জাতির উদ্ভবকালে অনার্য ও আর্যজাতির মেলবন্ধনের ফলে বাঙালির সামাজিক, আধ্যাত্মিক এবং চিন্তাজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য সংস্কারবাদ, বৌদ্ধ, জৈন সংস্কৃতি তাদের জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এই ধারা দীর্ঘকাল চলার পর দ্বাদশ শতাব্দীতে তুর্কি আক্রমণ বাংলায় সংস্কৃতির আদি যুগের অবসান ঘটায়।

(খ) মধ্যযুগে বাংলার সংস্কৃতি

মধ্যযুগে সুলতানী শাসনামলে আামাদের সংস্কৃতির বিকাশে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সুলতানী শাসনামলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক চাল, ধর্মীয় চর্চাকে উৎসাহিত করা হয়। হোসেন শাহের আমলে শ্রী চৈতন্যদেব বৈষ্ণবধর্ম প্রচার করেন কবি জীবনানন্দ দাশ একদা বলেছিলেন- ‘সময় মুছিয়া ফেলে সব এসে।’ মধ্যযুগে বাঙালি জীবনে তেমনটাই ঘটেছিল। তুর্কি আক্রমণ যেমন বিপর্যয় এনে দিয়েছিল, তেমনি নতুন সংস্কৃতি গঠনেরও সহায়ক হয়েছিল। এই সময়ে সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে বাংলায় উদারতা দেখা দেয়। অনার্য জাতির দেবদেবী উচ্চবর্ণের বাঙালিদের পূজনীয় হয়ে ওঠেন। ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে হুসেনশাহি বংশ প্রতিষ্ঠিত হলে মঙ্গলকাব্য, বৈয়ব অনুবাদ সাহিত্য, শাক্তপদাবলি প্রভৃতি ক্ষেত্রে জোয়ার আসে। মুসলমান ও হিন্দু সংস্কৃতির মিশ্রণও ঘটে। চৈতন্যদেবের সম্প্রীতির জোয়ারে ভেসে যায় বাংলা।  মোগল শাসকগণ কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনার জন্য সাহিত্যিকদের উৎসাহ দিতেন, কবিতা, গল্প শোনার জন্য লেখকদের দরবারে আহ্বান করতেন। ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজি সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসে বাংলা সাহিত্য। পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক কারণে আমাদের সংস্কৃতিতে অস্তিত্বের ইস্যু ছাড়া আর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।

(গ) আধুনিক যুগে বাংলার সংস্কৃতি

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে ইউরোপীয় সংস্কৃতির আগমনকালকে আধুনিক যুগ ধরা যেতে পারে। বঙ্গসংস্কৃতিও আমূল বদলে যায়। মধ্যযুগীয় ধর্মভাবনার বদলে আমদানি ঘটে যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনার। এই পর্বের প্রথম দিকে কলকাতাকে কেন্দ্র করে ‘বাবু’ সংস্কৃতিও গড়ে ওঠে। শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, প্রফুল্লচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র প্রমুখ ব্যক্তিত্ব বাঙালি সংস্কৃতিতে নবজাগরণ আনেন। ধর্মের ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও বিবেকানন্দ প্রচার করেন সহিষ্কৃতার বাণী। বাঙালি সাদরে গ্রহণ করে সেই বাণী-

The only God, Whom I believe, is the sum total of all souls.।।

My God the miserable, my God the poor of all races.”

-Vivekananda

বাঙালিরা অবশ্য সেখানেই থেমে থাকেনি। ক্রমশ তারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে লড়াইয়ে নামে। এর পাশাপাশি লোকসংগীত, চলচ্চিত্র, লোকশিল্প, কুটিরশিল্প, চিত্রশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলায় সাংস্কৃতিক বান আসে।

(ঘ) সাম্প্রতিককালে বাংলার সংস্কৃতি

সাম্প্রতিককালে বাংলার সংস্কৃতি শহর ও গ্রামীণ এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। বাংলা সংস্কৃতির জগতে কিছুটা অবক্ষয়ও দেখা দিয়েছে। পরিবর্তন এসেছে সংগীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য, নৃত্য, নাট্যাভিনয়, সংস্কার, রীতিনীতি সর্বত্রই।

সংস্কৃতির ধারক পাড়া-গাঁ:

 পল্লীগ্রামই মূলত সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। বাংলার সংস্কৃতিকে যেন আকড়ে ধরে রেখেছে পল্লী অঞ্চল । পাড়াগাঁয়ে প্রতিবেশিদের মধ্যে আন্তরিকতা, মমত্ববোধ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পল্লী জীবনের পোশাক-পরিচ্ছেদ, প্রথা, উৎসব, চিন্তা-ভাবনা, আচার-ব্যবহার সবকিছুর মধ্যে সমজাতীয়তা ও পারস্পরিক আত্মিক সংযোগ প্রকাশ পায়। পল্লী জীবনের এই অনন্য ও স্থায়ী সামাজিক আচরণ-অনুষ্ঠানের সমষ্টিই হলো জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এই পল্লীগ্রামেই লালিত-পালিত হয়। শীতের পিঠাপুলি উৎসব, নবান্নের উৎসব, পৌষমেলা, বৈশাখীমেলা, ঈদ-পার্বণ, জারিসারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী গান ও বিভিন্ন ধরণের খেলাধূলা প্রভৃতি বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রস্ফুটিত করে বিশ্ব অঙ্গনে।

বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: 

বাংলার প্রকৃতি ও সমাজ জীবনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এখানকার সাংস্কৃতিক জীবনধারার বিকাশ ঘটেছে। এখানে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ নানা জাতির ধর্ম বর্ণের মানুষের বাস। তারা সবাই মিলেমিশে প্রাণ খুলে তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে। পরস্পরের সাথে তারা আনন্দ ভাগ করে নেয়, একের উৎসব অনুষ্ঠানে অন্যরা যোগদান করে। বাংলার প্রধান প্রধান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে, লোকসাহিত্য, সঙ্গীত, ঋতুভিত্তিক উৎসব, বিভিন্ন প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, খেলাধুলা, সামাজিক প্রথা প্রভৃতি রয়েছে। ঈশ্বরে বিশ্বাস, ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে গ্রামীণ কবি সাহিত্যিকরা লোক সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। লোকসাহিত্যের মধ্যে আছে ছড়া, গীতিকা, ধাধাঁ, ব্রতকথা, উপকথা, রূপকথা, প্রবাদপ্রবচন, খনার বচন ইত্যাদি। গ্রামীণ সঙ্গীতের মধ্যে রয়েছে ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, জারি, মারফতী, পালাগান ইত্যাদি। গ্রামীণ উৎসব ও বাঙালির আমেজের মধ্যে রয়েছে বাংলা নববর্ষ, নবান্ন উৎসব, শতের পিঠা-পুলি উৎসব ইত্যাদি। বাংলার ঐতিহ্যবাহী জামদানী শিল্প আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ঢাকার শাখাঁর কাজ, টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামালপুরের বাসন, সিলেটের শীতল পাটি প্রভৃতি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। গ্রামীণ খেলাধুলার মধ্যে দাঁড়িয়া বান্ধা, গোল্লাছুট, হা-ডু-ডু, নৌকা বাইচের মতো সংস্কৃতি আজ কালের গর্ভে নিমজ্জিত। যৌথ পারিবারিক প্রথা, সামাজিক বন্ধন ধীরে ধীরে বিলপ্ত হচ্ছে। তথাপি শান্তি প্রিয় মানুষ সামাজিক ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হচ্ছে। 

বাংলার সংস্কৃতির ধরণ: 

বাংলার সংস্কৃতিকে ড. ওয়াকিল আহমেদ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যেমন

(ক) বাংলার নগর সংস্কৃতি:

 শহরের মানুষের যান্ত্রিক জীবন ইটের চার দেয়ালে লোহার খাচায় আবদ্ধ। নগর জীবনে পশ্চিমা তথা বিদেশিদের প্রভাব রয়েছে। নগরে বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতির মিশ্রণে গড়ে উঠেছে মিশ্র সংস্কৃতি। 

(খ) বাংলার লোক সংস্কৃতি: 

লোক সংস্কৃতি গ্রামবাংলার সংস্কৃতি। এটি সহজে পরিবর্তন হয় না। বিদেশি, পশ্চিমা ও নগর সংস্কৃতির প্রভাব এখানে কমই পড়ে।

(গ) আদিম সংস্কৃতি: 

বাংলায় বসবাসরত ক্ষুদৃ নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। বহির্জগতের সাথে তাদের সম্পর্ক খুবই কম। তারা নিজস্ব আচার, অনুষ্ঠান, ধর্মীয় বিশ্বাস ও জীবন প্রণালীতে অভ্যস্ত ও শ্রদ্ধাশীল। তারা সাধারণত চাষাবাদ, শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ করে জীবীকা নির্বাহ করে। গ্রহণ-বর্জনের রীতি না থাকায় এবং আনাগােনা ও লেনদেনের অভাবে ক্ষুদৃ নৃ-গোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ও বিস্তার প্রায় থেমেই আছে। 

সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন:

 বাঙালি জীবনবোধের উপর গড়ে উঠেছে আমাদের সংস্কৃতি। তবে বিভিন্ন সময়ে আমাদের সাংস্কৃতি পরিবর্তন হয়েছে। মূলত বিভিন্ন সময়ে এ দেশ শাসন করতে আসা বিদেশিদের দ্বারাই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি প্রভাবিত হয়েছে। ফলে বাংলা সংস্কৃতিতে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন। 

বাংলা সংস্কৃতির অবক্ষয়:

আজকের দিনে বাংলা সংস্কৃতির অবক্ষয় সুস্পষ্ট সমাজের সর্বস্তরে অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব সমগ্র জাতিকে গ্রাস করেছে। শিক্ষার নামে নৈতিকতাবিহীন কুশিক্ষা আর সমাজ সেবার নামে । দলাদলি চলছে। রাজনীতির নামে কাদাছােড়াছুড়ি, সঙ্গীতের নামে বহু ভাষার মিশ্রণে সুরহীন হৈহুল্লোড়, পােশাক পরিচ্ছেদে পশ্চিমা অনুকরণ আর চিত্তবিনােদনের ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় যৌনতা আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনকে কলুষিত ও গ্লানিময় করে তুলেছে। 

বাংলার সাংস্কৃতিক অবক্ষয়রোধে আমাদের করনীয়: 

বর্তমানে একই পৃথিবীর বাসিন্দা হিসেবে বিশ্ব সাম্রাজ্যের মধ্যে থেকেই আমাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর এ জন্য আমাদের করনীয়

·         বিদেশি সংস্কৃতির লালন বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশি সংস্কৃতির মোকাবেলায় দেশীয় সংস্কৃতিকে উপযোগী করতে হবে। 

·         বিদেশি সংস্কৃতির খারাপ দিকটা বাদে উত্তম দিক গ্রহণ করতে হবে। 

·         আমাদের সংস্কৃতিকে স্যাটেললাইট চ্যানেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারের বৈচিত্র্যের মাধ্যমে বিশ্বের সবপ্রান্তে ছড়িয়ে দিতে হবে। 

·         বিদেশি সংস্কৃতির নেতিবাচক দিক সম্পকে সকলকে সচেতন করতে হবে। 

·         বিজাতীয় কুরুচিপর্ণ সংস্কৃতি বন্ধের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। 

·         দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপােষকতা বৃদ্ধি করতে হবে। 

উপসংহার:

 দেহের জন্য যেমন প্রাণ, তেমনি জাতির জন্য সংস্কৃতি অপরিহার্য। সংস্কৃতি আমাদের সমাজ জীবনের প্রতিচ্ছবি। আর বাঙালির গর্ব এই বাংলার বহুকালের সংস্কৃতি। এখানে আছে অসাম্প্রদায়িকতা, বিভেদহীনতা ও অপরকে আপন করার ইচ্ছা। বিশ্বায়নের প্রভাবে আধুনিক ও বিদেশি অপসংস্কৃতির প্রভাবে আমরা আমাদের স্বতঃস্ফুর্ত জীবনধারা ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে হারিয়ে ফেলতে বসেছি। তাই বাংলার সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে। বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা সংহতকরণের মাধ্যমে ত্বরান্বিত হবে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন।বাংলার সংস্কৃতি প্রথম থেকে ছিল মিশ্র প্রকৃতির। বর্তমানেও তাই। তবে দুঃখের কথা এই যে, বাংলার সংস্কৃতির পাশাপাশি অপসংস্কৃতি এখন বিশেষভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে। মূলত যুবক শ্রেণির বাঙালিরা অনেকাংশে এই অপসংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তবে আশা করা যায় একদিন সুস্থ সংস্কৃতিই জয়লাভ করবে।

“যাহারা তোমায় বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো 

তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছো ভালো?”

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 আরো পড়ুন.......

Comments

Popular posts from this blog

রাষ্ট্র বিজ্ঞান কাকে বলে? || রাষ্ট্র বিজ্ঞান কী? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বলতে কি বুঝায়? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও? (What is Political Science?)

চাঁদ শব্দের প্রতিশব্দ/ সমার্থক শব্দ কিকি?

GDP ও GNP কাকে বলে? || GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য কি?