অর্থনৈতিক অঞ্চল/Economic Zone/অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প বিপ্লব অপার সম্ভাবনার নয়া দিগন্ত

অর্থনৈতিক অঞ্চল/Economic Zone/অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প বিপ্লব অপার সম্ভাবনার নয়া দিগন্ত


ভূমিকাঃ


শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা এতদিন পরিচিত ছিলাম ‘বিসিক’শিল্পনগরী ও ‘ইপিজেডের’ সঙ্গে। বিসিক

শিল্পনগরীর ধারণা বহু পুরনো। ছোট ছোটশি ল্পকারখানা দেশের সর্বত্র গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্র্রিজ কর্পোরেশনের(বিসিক) উদ্যোগে এ নগরী গড়ে তোলা হয়।দেশের প্রায় সব পুরনো জেলা শহরেই এ নগরী আছে। এর ফলাফল এখানে বিবেচ্য নয়।তারপর একটা ধারণার জন্ম হয়- আর সেটা হচ্ছে ‘এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন’। এগুলো বিশেষ শিল্প অঞ্চল যেখানে পণ্য উৎপাদিত হয় রফতানির উদ্দেশ্যে। বিশেষ

সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ দেয়া আছে এদের জন্য। সর্বশেষ পদক্ষেপ ‘ইকোনমিক জোন’বা অর্থনৈতিক অঞ্চল


১.অর্থনৈতিক অঞ্চলঃ

দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশে সুষম উন্নয়ন, পরিকল্পিত শিল্পায়ন,কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর জেলাগুলোর উন্নয়নকল্পে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের যেসব অঞ্চল চিহ্নিত করে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, সেসব অঞ্চলগুলোই অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত।বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সব জেলাতেই একটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।

২.বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলপ্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটঃ


বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)প্রতিষ্ঠায় ভারত ও চীনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকার ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো দেশে এ উদ্যোগ নেয়। তবে এক্ষেত্রে ভারতও চীনের অগ্রগতি সমান নয়। ১৯৬০ সালে প্রথম কোনো এশিয়ার দেশ হিসেবে ভারত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে।ভারত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন ২০০০-এর আওতায় এই প্রকল্প গড়ে তোলে।তবে ২০০০ সাল পর্যন্ত অর্থনীতিতে এর অবদান ছিল মাত্র ৫ ভাগ। ভারতে এসইজেড (স্পেশাল ইকোনমিক জোন) এর নামে অধিগ্রহণ করা জমির একটা বড় অংশই (৫২

শতাংশ) অব্যবহৃত থেকে গেছে। যে পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলে মূল্যবান কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তার বেশিরভাগই পূর্ণ হয়নি। বলা যায় দীর্ঘ ৪৫ বছরে দেশটির এ খাতে বিশেষ উন্নতি নেই। অন্যদিকে এগিয়ে গিয়েছে চীন। তাদের দেখাদেখি অন্য দেশগুলোও আগ্রহী হয় এমন অঞ্চল গড়ে তুলতে। কিন্তু সাফল্য পায়নি তেমন। ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়াও কিছু কিছু সাফল্য অর্জনক রেছে। চীন বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে তার দেশে আনতে পেরেছে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে তারা সমন্বয় করতে পেরেছে পরিকল্পনার। পর্যাপ্ত স্থান সংকুলানেরও সুযোগ তাদের ছিল। ভূমি থেকে উচ্ছেদের উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা চীনে ঘটেনি; যা ভারতে ঘটেছিল।অন্যদিকে স্বাধীনতার চার দশক পেরিয়ে গেলেও পরিকল্পিত শিল্পায়নের পথে হাঁটতে পারেনি বাংলাদেশ। ঢাকা,চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সাভার আর গাজীপুরে অপরিকল্পিত ভাবে কিছু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলেও মূলত কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর ভর করেই বাংলাদেশ চার দশক পার করে ফেলেছে। কিন্তু সব

নাগরিকের জন্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি দেশের কোনো সরকারই। ফলে শহর থেকে শুরু করে জেলা এমনকি ব্যক্তিপর্যায় পর্যন্ত ধনী-দরিদ্র বৈষম্য প্রকট হয়েছে। তবে আশার কথা হলো, কৃষি আর গ্রামীণ অর্থনীতির পুরনো বৃত্ত ভেঙে ভারতের মতো পরিকল্পিত

শিল্পায়নের পথেই হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগের মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর পরই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন বৈষম্য দূর করতে

দেশের সব জেলায় একটি করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবেন।এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পেছনে মূলত উল্লেখযোগ্য কারণও রয়েছে। যেমন-আমাদের জমির স্বল্পতা আছে। এই ছোট্ট একটা ভূখণ্ডে ১৬ কোটি মানুষের বাস।তাদের খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়া,

কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ফসল উৎপাদনকরা, সেই ফসলি জমি রক্ষা করা ও পরিবেশ রক্ষা করাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ। যত্রতত্র সেখানে-সেখানে শিল্প গড়ে না তুলে বরং সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী উন্নয়ন করা মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে; ২০২১

সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ পরিণত করার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত উৎপাদন বৃদ্ধি’র জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ নিয়েছে।

৩.অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধরণঃ


সারাদেশে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দিতে আগামী ১৫ বছরে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ১০০ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায়

বাংলাদেশের সরকার। বেজা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি

(পিপিপি) ও বিদেশি- এই চার ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভাগ থাকলেও সরকার তা ছয় ধরনের করতে যাচ্ছে। এ জন্য সংশোধন হতে যাচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল

আইন। নতুন আরও দুটি শ্রেণি করা হচ্ছে।অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে দেশীয় এক বা একাধিক সংস্থার জন্য এবং সরকার থেকে সরকার পর্যায়ের জন্য।


ক) সরকারিঃ

সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সরকারি মালিকানাতেই স্থাপনের ইচ্ছে সরকারের।বেজার তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে দুটি, জাপানের সঙ্গে দুটি ও চীনের সঙ্গে একটি, পিপিপির ভিত্তিতে বেসরকারি কোম্পানি পাওয়ার প্যাকের সঙ্গে একটি এবং সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতে ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ চলছে।


খ) বেসরকারিঃ

বেজা সূত্র জানায়, বেসরকারি পর্যায়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে ছয়টি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হচ্ছে

মেঘনা গ্রুপেরই দুটি—৭২ একরের মেঘনা পিইজেড ও ২২ একরের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ২১৬ একরের আবদুল মোনেম পিইজেড ও নরসিংদীর পলাশে হচ্ছে ২০০ একরের এ কে খান পিইজেড।বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো

বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে স্থানীয়, প্রবাসী বাংলাদেশি বা বিদেশি ব্যক্তি, সংস্থা ও ব্যবসায়ী দলকে।

গ) সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব

(পিপিপি)ঃসরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে (পিপিপি) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। সরকারি খাতের চারটির মধ্যে একটি হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে। পিপিপিগুলো হবে দেশি বা বিদেশি ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ৩৭টি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বকে (পিপিপি) এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হবে। ‘পিপিপির’ অধীনে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে।

ঘ) বিদেশীঃ

পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি ছাড়াও সম্পূর্ণ বিদেশী উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অনুমতি পেয়েছে চীন, জাপান ও ভারত। তবে চীন ও জাপানকে শুধু জমি দেয়া হচ্ছে। দেশ দুটি নিজ উদ্যোগ ও অর্থায়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজ করছে। এক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ পাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ভারতের পক্ষে কাজটি করে দিচ্ছে।

ঙ) বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলঃ

অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে আবার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে দুটি। একটি পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে কক্সবাজারের সাবরাংয়ে, অন্যটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের
জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে। সাবরাংয়ের আয়তন ১ হাজার ২৮ একর, আর কেরানীগঞ্জেরটিরআয়তন ১০৫ একর। বেসরকারি, পিপিপি বা সরকারি উদ্যোগে গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন।

চ) পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চলঃ

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি চারটি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ৩৫০, কুমিল্লার ময়নামতিতে ১০৩, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ১১৪ এবং পটুয়াখালীতে ১১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।

৪. অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সরকারের গৃহীত কর্মসূচীঃ


স্বাধীনতার চার দশক পর প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই। ২০১০ সালের আগস্টে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন পাস হয়। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হয়। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকি প্রতিষ্ঠায় করা হয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এরপর চলতি অর্থবছরের (২০১৫-২০১৬) বাজেট ঘোষনার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন আগামী ১৫ বছরের

মধ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। সুষম উন্নয়ন, পরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং সবার জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে ৪৬টি অর্থনৈতিক

অঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৩০সালের মধ্যে সারা দেশে ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান এবং আরও ৪০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় বৃদ্ধির উদ্দেশে বেজা কাজ করছে। দেশে বিনিয়োগে গতি আনতে বিনিয়োগ বোর্ড বেসরকারিকরণ কমিশনকে একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।


৫.অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বর্তমান অগ্রগতিঃ


ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করেছেন। ১০টি অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল চারটি ও বেসরকারি অঞ্চল ছয়টি। সরকারিগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই,মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট, বাগেরহাটের মংলা ও কক্সবাজারের সাবরাং পর্যটন অঞ্চল। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছয়টি
অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে আছে নরসিংদীর পলাশে ‘এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল’,নারায়ণগঞ্জের ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ও ‘মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরে ‘বে অর্থনৈতিক অঞ্চল’
এবং নারায়ণগঞ্জে ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’।


সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উদ্ভোধন হওয়া ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে চলতি বছরেই ৪ প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাচ্ছে।এছাড়া ছয় বেসরকারি অঞ্চল ৭২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। জানা গেছে,বেসরকারি খাতে উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়া ছয়টি অঞ্চলের মধ্যে চারটিতে স্থাপিত শিল্প-কারখানা চলতি বছরের মধ্যে

উৎপাদনে যাবে। আমান, মোনেম, একে খান ও মেঘনা গ্রুপ এ চারটি অঞ্চল স্থাপনের কাজ করছে। সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতেএ ছয়টি অঞ্চল গড়ে তুলতে পাঁচ কোম্পানি প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলো ইজেডগুলোর প্রাথমিক উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।


অন্যদিকে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে এরই মধ্যে ৪৬টির অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন গভর্নিং বোর্ড। বাকিগুলোও অনুমোদনের অপেক্ষায়।
২০১৮ সালের মধ্যে ২২টির কাজ সম্পন্ন হবে।এর মধ্যে আগামী দুই বছরে সিরাজগঞ্জ,মংলা, মিরসরাই, আনোয়ারা ও শ্রীহট্টসহ মোট ৯টি উৎপাদনে যেতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে (পিপিপি) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পাশাপাশি বিদেশি উদ্যোক্তাদের নিয়ে আরও চার ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী২০১৬-১৭ অর্থবছরের মধ্যে আরও ১০ থেকে১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানও নির্বাচন চূড়ান্ত করা হবে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


বেজা সূত্র জানায়, ভারতের দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে। এ জন্যই আইন সংশোধন করতে হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি উদ্যোগে
দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে মিরসরাইয়ে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে ইছাখালী চরের ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে। এতে এক হাজার ২২২টি কারখানার প্লট তৈরি করা হবে। তা ছাড়া এরই মধ্যে চরে জেগে ওঠা ১৫ হাজার একর জমির মধ্যে প্রথম অবস্থায় চারটি মৌজায় ৬৩৯০ দশমিক ৯৬৭০ একর জায়গারও
উন্নয়ন কাজ চলছে। সরকারি ও বেসরকারি ছাড়াও সম্পূর্ণ বিদেশী উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অনুমতি পেয়েছে চীন, জাপান ও ভারত।চীন ও জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মনোনীত ডেভেলপাররাই
উন্নয়ন করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার শুধু জমি দেবে। আর জমির আশপাশে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। পাশাপাশি বাইরের
অবকাঠামোগুলো উন্নয়ন করে দেবে বেজা।অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরের অবকাঠামো তারাই উন্নয়ন করবে। দেশ দুটি নিজ উদ্যোগ ও অর্থায়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজ করছে। এক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ পাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ভারতের পক্ষে কাজটি করে দিচ্ছে। চীন, জাপান ও
ভারতের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো।

ক) চীনঃ

চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়েছে।চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৮৪৪ একর জমির ওপর। চীন সরকারের পক্ষে এটি করছে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এজন্য ৭৭৪ একর জমি দেয়া হচ্ছে। চীনের সঙ্গে মূল চুক্তি শিগগিরই সই করা হবে। এর মধ্যে সরকারি জমি ২৯০ একর বন্দোবস্ত দেয়া
হয়েছে। বাকি জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ মালিকানা
থাকবে।

খ) জাপানঃ

গাজীপুরের শ্রীপুরে হচ্ছে জাপানি বিনিয়োগে ৫১০ একরের শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল। জাপান অর্থনৈতিক
অঞ্চলের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজপ্রায় শেষ করেছে। এমওইউ সই না হলেও প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। দেশটির জন্য ৬০০একরের কিছু বেশি জমি বরাদ্দ দেয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চলেও বাংলাদেশের ৩০শতাংশ মালিকানা থাকবে।

গ) ভারতঃ

ভারতকে মংলা ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মংলায় ২০৫ একর জমি বরাদ্দ চেয়েছে ভারত। তবে এ মুহূর্তে বেজার

কাছে ১১০ একর জমি রয়েছে। বাকি জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আর ভেড়ামারায় প্রায় ৩৭১ একর জমি চেয়েছে ভারত। এখানে বেজার কাছে প্রায় ৪১৬ একর জমি রয়েছে।ভারতের অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি উন্নয়নের

জন্য দেশটির রাষ্ট্রীয় ঋণে (এলওসি) একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ৭০৪ কোটি টাকা। আর ভারতের ঋণেই দেশটির জন্য

অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি উন্নয়নের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বেজা। শিগগিরই এজন্য ডেভেলপার নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু করবে সংস্থাটি। উল্লেখ্য, গত বছরের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় দ্বিতীয় এলওসির চুক্তি করে বাংলাদেশ। ২০০ কোটি ডলারের ওই ঋণে ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সে সময় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়। তবে হঠাৎ করে দ্বিতীয় এলওসিতে নতুন আরেকটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি হলো ভারতের জন্য
অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন। প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার কাজ করছে বেজা। এরই মধ্যে প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) অনুমোদন করেছে পরিকল্পনা

কমিশন। ২০১৭ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি উন্নয়ন শেষে দ্রুত হস্তান্তরে কাজ করে যাচ্ছে বেজা।

৬.অর্থনৈতিক অঞ্চল ব্যবস্থাপনাঃ
গত পাঁচ বছরে ৪৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেয়া হলেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে মোট ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এগুলোতে স্থাপিত শিল্প কারখানায় উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। সেসঙ্গে যাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে, তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকি করবে। এর বাইরে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরের অংশের সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা, সেখানে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ
অন্যান্য সেবার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে বেজার কাজ। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে নকশা অনুমোদন করা, তদারকি ও এর
অনুমোদন দেয়া। ভেতরে কোনো উন্নয়ন বেজা করার কথা না। এজন্যই সরকারি-সরকারি, সরকারি-বেসরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ বা ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক অঞ্চলেরলাইসেন্স বা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা নিজেরাই এ অঞ্চলগুলোর ভেতরের অংশ উন্নয়ন করে নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বেজা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।


৭.বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজঃ


অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুধু দেশীয় বিনিয়োগকারী নয়, বিদেশি বিনিয়োগকারী টানতে নানা ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। কর অবকাশ সুবিধা, আয়ের ওপর কর মওকুফ,যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
প্রণোদনা ঘোষণার পর তার সুফলও পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে তাইওয়ানের স্টেলা গ্রুপ,চীন, জাপান, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন, ভারতের রিলায়েন্স, আদানি গ্রুপের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে।

৮.অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার গুরুত্বঃ

ক) কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ


বেজা সূত্র মতে, এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে অন্তত ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে।

খ) রপ্তানি আয় বৃদ্ধিঃ

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট এবারের (২০১৫-১৬) বক্তৃতায় দেয়া তথ্য মতে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে রপ্তানি আয় হবে চার হাজার কোটি ডলার; যা বর্তমান রপ্তানি আয়ের দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতি ডলার ৭৮ টাকা ধরে হিসাব করলে চার হাজার কোটি ডলারের মূল্যমান দাঁড়ায় বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা, যা প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের চেয়েও বেশি।

গ) পরিকল্পিত শিল্পায়নঃ

অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে উন্নয়নকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে পরিকল্পিত শিল্পায়ন সম্ভব হবে।

ঘ) সুষম উন্নয়নঃ


যেসব জেলা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে, সেসব জেলায় উন্নয়ন ঘটানো হবে শিল্পায়নের মাধ্যমে। কোনো জেলা আর পিছিয়ে থাকবে না। সব জেলায়ই একটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।

ঙ) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিঃ


অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো প্রতিষ্ঠা লাভ করলে এর মাধ্যমে দেশের চেহারা বদলে যাবে। উৎপাদনশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ হবে। খাদ্য
নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

উপসংহারঃ

সরকারের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত খুবই সময়োপযোগী। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সুবিধা

বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি আকৃষ্ট করবে। কারণ, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়াসহ নানা কারণে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। অর্থনৈতিক অঞ্চল ভিত্তিক সুবিধা তাদের এ আগ্রহকে আরো কয়েকগুন বাড়াবে বলে আশা করি।এক্ষেত্রে শিল্প চালু করার ক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য দরকার টেকসই উন্নয়ন। কৃষিজমি নষ্ট না করে শিল্পায়ন খুবই জরুরি। অন্যদিকে সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরী ও গ্যাস
সংকটের বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে।পাশাপাশি উৎপাদন, শিল্পায়ন ওবাজারজাতকরণকে বহুমুখীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে

আরো পড়ুন....... 



Comments

Popular posts from this blog

রাষ্ট্র বিজ্ঞান কাকে বলে? || রাষ্ট্র বিজ্ঞান কী? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বলতে কি বুঝায়? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও? (What is Political Science?)

চাঁদ শব্দের প্রতিশব্দ/ সমার্থক শব্দ কিকি?

GDP ও GNP কাকে বলে? || GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য কি?