গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন কি?||what is the Glasgow Climate Conference? এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

 COP26: গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন কি?||what is the Glasgow Climate Conference? এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? 


জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে ৩১ অক্টোবর, ২০২১ হতে  স্কটল্যান্ডের বন্দর নগরী গ্লাসগোতে জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু  সম্মেলন COP26 (26th Conference of the Parties) অনুষ্ঠিত হয়েছে,  যা ১২ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত চলেছে।


২৬তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন (কপ ২৬)। পৃথিবীর প্রায় ১২০ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এখানে এক হয়েছেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখা, জলবায়ু তহবিলের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সহযোগিতা বাড়ানোর তিনটি প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘের এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশও। ১ ও ২ নভেম্বর সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বক্তব্য দেবেন সম্মেলন শুরুর প্রথম দিনেই। ৪৮ দেশের জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের’ (সিভিএফ) চেয়ারপারসন হিসেবেও তিনি সেখানে ভূমিকা রাখবেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে ‘ন্যাশনালি ডিটারমিন্ড কনট্রিবিউশনস’ (এনডিসি) ঠিক করা, ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয় সম্মেলনে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


গ্লাসগোতে চলমান সম্মেলনটি  আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দিতে পারে।

 কয়লা, তেল এবং গ্যাসের মতো মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে কার্বণ নির্গমনের কারণে পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে।

ফলে দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি – ঘূর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস, বন্যা, তাপপ্রবাহ, এবং বনের আগুন ইত্যাদি – তীব্রতর হচ্ছে। গত দশকটি এ বিশ্ব রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ ছিল এবং এ বিষয়ে বিশ্ববাসীর  কার্বণ নির্গমণ হ্রাসে যৌথ পদক্ষেপের প্রয়োজন।


এই COP26 সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে ২০০ টি দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বণ নির্গমন কমানোর পরিকল্পনার জন্য বলা হয়েছে

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তিতে এদেশগুলির সকলেই  এ শতাব্দিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫° সে.  রাখার এবং ২° সে. এর বেশ  নিচে রাখতে সম্মত হয়েছিল – যাতে এ বিশ্ব  জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে পারে।


এর অর্থ হল ২০৫০ সালে কার্বণ নিট শূন্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত দেশগুলিকে কার্বণ নির্গমন হ্রাস করতে হবে।

COP26 এ কি করতে সম্মত হয়েছে?

অনেক দেশ শীর্ষ সম্মেলনের আগে কার্বণ নির্গমন কমানোর পরিকল্পনা করেছে, তবে নতুন ঘোষণার ঝাঁকুনি রয়েছে:


গাছ: ১০০ টিরও বেশি দেশের বিশ্ব নেতারা বন উজাড় মোকাবিলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গাছ প্রচুর পরিমাণে CO2 শোষণ করতে পারে। এর আগেও অনুরূপ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে এটি আরও ভাল অর্থায়নে করার প্রতিশ্রুতি।

মিথেন: ১০০ টিরও বেশি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নিঃসরণ ৩০% কমানোর পরিকল্পনায় যোগ দিয়েছে। তবে বিশ্বের মিথেন নিঃসরণকারী বড়দেশ চীন, রাশিয়া এবং ভারত এ পরিকল্পণায় যোগ দেয়নি।

কয়লা: ৪০ টিরও বেশি দেশ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে, কয়লা বিদ্যুৎ হলো একক বৃহত্তম জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তবে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সবচেয়ে কয়লা নির্ভর দেশগুলির মধ্যে কয়েকটি এ উদ্যোগে স্বাক্ষর করেনি।

অর্থ: বিশ্বের ৪৫০টি সংস্থা ১৩০ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার নিয়ন্ত্রণ করছে – বিশ্বব্যাপী প্রাইভেট সম্পদের প্রায় ৪০% – সবুজ প্রযুক্তিতে (“clean” technology) বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেমন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তি (renewable energy) উৎপাদনে।


COP26 এ কারা আছেন?

গ্লাসগোতে বিশ্বনেতা, আলোচক এবং সাংবাদিকসহ প্রায় ২৫,০০০ লোকের উপস্থিতি রয়েছে। তবে রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টগণ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং হাজার হাজার জলবায়ু কর্মীগণ  সম্মেলনে যোগ  দিয়েছে এবং বিক্ষোভ করছে

এ সম্মেলনে যে সকল বিষয় বেশি আলোচিত হবে তা হলো:

COP26: COP মানে কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস। UN দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, COP1 ১৯৯৫ সালে হয়েছিল –এখন ২৬ তম সম্মেলন।

প্যারিস চুক্তি: প্যারিস চুক্তি বিশ্বের সমস্ত দেশকে একত্রিত করেছে – প্রথমবারের মতো – বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলা এবং গ্রিনহাউস-গ্যাস নির্গমন কমানোর একক ঐতিহাসিক চুক্তিতে।

IPCC: জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক গবেষণা পরীক্ষা করে।

১.৫° সে.: বিজ্ঞানীদের মতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১.৫° সে. -এর নিচে রাখা-প্রাক-শিল্প সময়ের তুলনায়-জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলি এড়াবে।

এ সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসাবে, যুক্তরাজ্য চায় সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য কার্বণ নির্গমনে পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোক – সেইসাথে ২০৩০ সালের মধ্যে বড় একটা  হ্রাস যাতে অর্জণ করা সম্ভব হয় তার প্রতিশ্রুতিতে সম্মত হোক।

জলবায়ু বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারও চাইবে, যেমন ইতোমধ্যে বন উজাড় রোধ করণ এবং মিথেনের নির্গমণ হ্রাস বিষয়ে সম্মত হয়েছে।


ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলি আগামী পাঁচ বছরে একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক প্যাকেজ চাইবে।

প্যারিশ চুক্তি অনুযায়ী এ শতাব্দিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫° সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আর বেশি সময় নেই বলে এর থেকে কম কিছুকে অপর্যাপ্ত বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।


যাইহোক, কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে বিশ্ব নেতারা এটিকে অনেক দেরিতে ছেড়ে দিয়েছেন এবং COP26-এ যাই হোক না কেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫° সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যকে অর্জন করা যাবে না।


আরো পড়ুন..... 

Comments

Popular posts from this blog

রাষ্ট্র বিজ্ঞান কাকে বলে? || রাষ্ট্র বিজ্ঞান কী? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বলতে কি বুঝায়? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও? (What is Political Science?)

চাঁদ শব্দের প্রতিশব্দ/ সমার্থক শব্দ কিকি?

GDP ও GNP কাকে বলে? || GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য কি?