মুদ্রানীতি কাকে বলে? || মুদ্রানীতি কি?( What is Monetary Policy?) || মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য কি? || মুদ্রানীতির লক্ষ্য সূমহ কি কি?(What is the Objectives of Monetary Policy)

মুদ্রানীতি কাকে বলে? ||  মুদ্রানীতি কি?( What is Monetary Policy ):

মুদ্রানীতিঃ( Monetary Policy):

মুদ্রানীতি বলতে সংক্ষেপে সরকারের অর্থ সংক্রান্ত নীতিকেই বুঝায়। অর্থাৎযে নীতির সাহায্যে দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা পরিচালনা এবং মুদ্রার যোগান ও ঋণের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জন করা হয় তাকে মুদ্রানীতি বলে। 

অর্থনীতি ভাষায়, মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য দুটি, তা হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা বা এগিয়ে নিতে সহায়তা করা। বাজারে অতিরিক্ত মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেলে মুদ্রাস্ফীতি হয়। এতে মুদ্রার মান কমে যায় এবং মুদ্রা দুর্বল হয়ে পড়ে

●অধ্যাপক আর.পি.কেন্ট বলেন, “ পূর্ণ নিয়োগের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচলিত অর্থের যোগানের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধির পরিচালনার নীতিকে মুদ্রানীতি বলা হয়। 

●অধ্যাপক এ . জি জনসন বলেন “ আর্থিকনীতি হলাে এমন এক ধরনের নীতি যার দ্বারা কেন্দ্রীয় অর্থের যােগান নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কতকগুলাে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে ”

●ডঃ পল এনজিগ বলেন “ কোন সমাজের আওতাধীন মুদ্রা ব্যবস্থার প্রতি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের আচরণকে মুদ্রানীতি বলে।


●বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, সাধারণত মুদ্রার গতিবিধি প্রক্ষেপণ করে মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতির অন্যতম কাজগুলো হলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা, ঋণের প্রক্ষেপণের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ঋণের যোগান ধার্য করা এবং মুদ্রার প্রচলন নিয়ন্ত্রণ করা। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ এবং সামষ্টিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে।


অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে মুদ্রানীতি একটি অপরিহার্য্য হাতিয়ার। সকল দেশের মুদ্রানীতি একই রকম হয়না। মুদ্রানীতি প্রণয়ন দেশের ক) ভৌগলিক অবস্থান খ) সমাজ কাঠামো গ) দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল।


প্রতি বছর দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একবার বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে। আরেকবার  মুদ্রানীতি ঘোষণা হয় বছরের মাঝামাঝিতে অর্থাৎ জুলাইতে।মুদ্রানীতি দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে।  তবে, মুদ্রানীতির আরেকটা কাজ হলো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।


মুদ্রানীতির ‘টুল’ বা যন্ত্র দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ (মানি সাপ্লাই) নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে আগামী দিনগুলোতে জিনিসপত্রের দাম কম থাকবে, নাকি জিনিসপত্রের দাম বাড়বে  অথবা আগামী ছয় মাস বা একবছর সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে নাকি ব্যয় কমবে, দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়বে, নাকি চাকরির সুযোগ তথা কর্মসংস্থান বাড়বে , দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি বাড়বে নাকি কমবে তার একটা রূপরেখা থাকে মুদ্রানীতিতে ।

মুদ্রানীতির লক্ষ্য সমূহ(Objectives of Monetary Policy) :

সকল দেশের মুদ্রানীতির লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য এক নয়। মুদ্রানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত তা মূলত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যেমন একটা উন্নত দেশের মুদ্রানীতি ও একটা অনুন্নত দেশের মুদ্রানীতি একরকম হবে না।
তবে সাধারণত, প্রায় সকল দেশের মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্যগুলো হচ্ছে-

●মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা
●যুক্তিসঙ্গত মূল্য স্থিতিশীলতা
●ব্যবসায় চক্র স্থিতিশীল রাখা
●অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করা
●বিনিময় হার স্থিতিশীলতা
●সুদের হার নিয়ন্ত্রণ এবং
●বেকারত্ব হ্রাস করা


দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুলত এই লক্ষ্য নিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে। যখন মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, তখন বেকারত্ব হ্রাস পায় অর্থাৎ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে।



আর ও পড়ুন...

Comments

Popular posts from this blog

রাষ্ট্র বিজ্ঞান কাকে বলে? || রাষ্ট্র বিজ্ঞান কী? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বলতে কি বুঝায়? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও? (What is Political Science?)

চাঁদ শব্দের প্রতিশব্দ/ সমার্থক শব্দ কিকি?

GDP ও GNP কাকে বলে? || GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য কি?