বাংলাদেশের পোশাক শিল্প||Garment industry of Bangladesh।।বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যা ও সমাধান||বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের গুরুত্ব।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প|| Garment industry of Bangladesh।।বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যা ও সমাধান|| বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের গুরুত্ব।
ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে ষাটের দশকে। তবে সত্তরের দশকের শেষের দিকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে এই শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। পোশাক শিল্প তৈরি পোশাক বা আরএমজি (Readymade Garments) নামে সমধিক পরিচিত।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ যেখানে শিল্পের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেনি। তবে বাংলাদেশে যেসব শিল্পের বিকাশ সাধন হয়েছে তার মধ্যে পোশাক শিল্প প্রধান। রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। কেবল রপ্তানি বাণিজ্যে নয় এর সাথে জড়িত আছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। সারা বিশ্বে পোশাক খাতে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বমানের এ পোশাক শিল্প আজ সংকটের মুখোমুখি। অর্থনৈতিক মন্দা, মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতা, জি.এস.পি সুবিধা বাতিলের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি অনেকটা হুমকির মুখে।
পোশাক শিল্পের ইতিহাসঃ
পোশাক শিল্প বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮০ সালে পোশাক শিল্পে সরকার পাঁচ বছরের জন্য ঋণ প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সাল নাগাদ এ শিল্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০টির মত। ফলে দিনে দিনে পোশাক শিল্পের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। ১৯৮৫-৮৬ সাল নাগাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অসংখ্য পোশাক শিল্প গড়ে উঠে।
পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থাঃ
২০১৯ সালেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। জেনেভায় এক সম্মেলনে একথা জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার -ডব্লিউটিও। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় হয়েছে প্রায় ২৮ কোটি মার্কিন ডলার।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে গ্লোবাল ক্লোথিং এক্সপোর্টে বাংলাদেশের বাজার অংশিদারিত্ব (মার্কেট শেয়ার) ছিলো ৬.৮ শতাংশ। এর আগের বছর ২০১৮ সালেও এ শেয়ার ছিলো ৬.৪০ শতাংশ। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশিদারিত্ব বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৯ সালে তৈরি পোশাকের রফতানি বাজারে শীর্ষ পাঁচ দেশ চীন ৩০.৮ শতাংশ, বাংলাদেশ ৬.৮০ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৬.২ শতাংশ, ভারত ৩.৫ শতাংশ এবং তুরস্ক ৩.২ শতাংশের যোগান দেয়।
পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্যময়তা আনতে পারলে এই রফতানির আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতি বিশ্লেষক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি এখন যে তৈরি পোশাকের পণ্যগুলোতে রয়েছে, সেখানে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে আর অন্যান্য দেশে যে সমস্ত পণ্য উৎপাদিত হয়, সে সমস্ত পণ্যের সক্ষমতা যদি আমাদেরও তৈরি হয়, তাহলে সেই পণ্যের ক্রেতারাও বাংলাদেশে আসবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছে। কাঁচামাল সুবিধা, ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে মূলত শহর কেন্দ্রিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। ফলে প্রতিবছর দ্রুত গতিতে কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানা বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৪৩টি কারখানা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে। যার মধ্যে ৪১টি প্লাটিনাম কারখানা
নিম্নে ছকের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিভিন্ন বছরে কারখানার সংখ্যা তুলে ধরা হলো-
সাল কারখানার সংখ্যা
২০১০ - ৫,০৬৩
২০১১ - ৫,১৫০
২০১২- ৫,৪০০
পোশাক শিল্পের কারখানাসমূহ অধিকাংশ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানে অবস্থিত। বর্তমানে পোশাক কারখানা দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে। ফলে জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। পোশাক শিল্প বর্তমানে দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ও মহিলা শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বৃহৎ খাত। দেশের মোট শ্রমিকের ৭৬ ভাগই পোশাক শিল্পে নিয়োজিত আছে। নিম্নে ছকের মাধ্যমে পোশাক শিল্পে বিভিন্ন বছরে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা তুলে ধরা হলো-
সাল ২০১০ ২০১১ ২০১২
শ্রমিকের সংখ্যা ৩.৬ মিলিয়ন ৩.৬ মিলিয়ন ৪.০ মিলিয়ন
বিশ্ববাজারে পোশাক শিল্পঃ
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ২০টির অধিক দেশে পোশাক রপ্তানি করে থাকে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। যা মোট রপ্তানির প্রায় ৫৬%। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়াও জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রভৃতি দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি করা হয়। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের প্রথম চীন। তারপর দ্বিতীয় স্থানটি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। পোশাক শিল্পে বর্তমানে প্রায় ৮৫টি ক্যাটগরি রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৩৬টি ক্যাটাগরিতে উৎপাদন করে থাকে।
পোশাক শিল্পের গুরুত্বঃ
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সর্ববৃহৎ উৎস হলো পোশাক শিল্প। যা নিরক্ষর, স্বল্পশিক্ষিত পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। নিম্নে এ শিল্পের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-
কর্মসস্থান সৃষ্টিঃ
বাংলদেশ একটি জনবহুল দেশ। পোশাক শিল্প বেকার জনশক্তি, অদক্ষ ও অশিক্ষিত মহিলাদের কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে। পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক শ্রমিক নিয়োজিত আছে। তারা জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখে।
দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টিঃ
বাংলাদেশে দক্ষ উদ্যোক্তার অভাবে শিল্পোন্নয়নের গতি সঞ্চারিত হচ্ছে না। পোশাক শিল্প দেশে দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
রপ্তানি বাণিজ্যঃ
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। সুতরাং এদেশের অর্থনীতির জন্য এ খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দারিদ্র্য বিমোচনঃ
পোশাক শিল্প বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, পুষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করছে।
দ্রুত শিল্পায়নঃ
পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে অন্যান্য শিল্পের দ্রুত শিল্পায়ন ঘটেছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে স্পিনিং, উইনিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং ও প্রিন্ট শিল্প গড়ে উঠেছে।
সহায়ক শিল্পের বিকাশঃ
পোশাক শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে অন্যান্য সহায়ক শিল্পের বিকাশের পথ প্রশস্ত হয়েছে। যেমন- ব্যাংক, বীমা, ফ্রেইট ব্যবসা, ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং এজেন্টের কাজ ও নতুন কসমেটিক্স কারখানাসহ অন্যান্য সহায়ক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
তাছাড়া দেশি কাপড়ের বাজার সৃষ্টি, শিক্ষার প্রসার, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি, বস্ত্র শিল্পের উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পোশাক শিল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।
পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয়:
১৯৭৬ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয়ে বর্তমানে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি রূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে পোশাক শিল্প রপ্তানি করে। নিম্নে পোশাক শিল্প হতে বিভিন্ন অর্থবছরের রপ্তানি আয় দেখানো হলো-
(মিলিয়ন মার্কিন ডলারে)
সাল ২০১০ ২০১১ ২০১২
তৈরি পোশাক ৮৪৩২ ৯৬০৩ ৬১১৯
নিটওয়্যার ৯৪৮২ ৯৪৮৬ ৫১২১
পোশাক শিল্পের সমস্যাঃ
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় শিল্প। তবে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিম্নে পোশাক শিল্পের সমস্যাসমূহ তুলে ধরা হলো-
কাঁচামালের অভাবঃ
পোশাক শিল্পের বড় সমস্যা হলো পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব।
পোশাক শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। সুষ্ঠু শ্রমিক নিরাপত্তার অভাবে বিভিন্ন সময়ে আগুনে পুড়ে, ভবন ধ্বসে অনেক শ্রমিক নিহত হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের ফলে ১১২৯ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। শ্রমিক স্বার্থ সুরক্ষা ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তাজনিত কারণে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালের ২৮ জুন জিএসপি সুবিধা বাতিল করে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবঃ
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পোশাক শিল্পে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ডাক দিয়ে থাকে। ফলে সময়মত পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।
পরিবহন সমস্যাঃ
বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার কারণে সময়মত কাঁচামাল সরবরাহ ও অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
পোশাক শিল্পের মালিকেরা অনেক সময় প্রয়োজনীয় ঋণ পায় না। ফলে কারখানা স্থাপনসহ কারখানা উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করতে সমস্যা হয়।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাঃ
বাংলাদেশ যেসব দেশে পোশাক রপ্তানি করে থাকে সেসব দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে রপ্তানি আয় অনেক কমে গেছে।
সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপঃ
পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতির বৃহৎ অংশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে এ শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে হবে। নিম্নে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলা তুলে ধরা হলো-
- বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্কের হার নমনীয় করার ব্যাপারে সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ব্যবস্থা ও এর মানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা ও কর্মপরিবেশের সুষ্ঠু নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে বাতিলকৃত জিএসপি সুবিধাসহ অন্যান্য সুুবিধা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
- দ্রুত পণ্য পরিবহনের জন্য সড়কপথ, রেলপথ প্রভৃতি উন্নয়ন করতে হবে।
- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। হরতাল, অবরোধসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতিবিরোধী সকল কর্মকান্ড পরিত্যাগ করতে হবে।
- শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- পোশাক শিল্পকে সর্বাধুনিক করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে।
- পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
- গার্মেন্টস শ্রমিকদের থাকার জন্য গার্মেন্ট পল্লী নির্মাণ করতে হবে।
পোশাক শিল্পের বর্তমান অর্জন ও পদক্ষেপ ঃ
অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরি পোশাক খাত বর্তমানে একটি শক্তিশালী শিল্পে পরিণত হয়েছে।
এ শিল্পে টেকসই উন্নয়ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শ্রমিকদের কল্যাণ ও সুষম শিল্প সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ কারণে এ শিল্প বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছে।
*নেদারল্যান্ডসে ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিবিসিসিআই) আয়োজিত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কল্যাণ’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি এসব কথা বলেন।
★নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পোশাক শিল্পে শিশুশ্রম অপসারণ এবং নিম্নতম মজুরি নিশ্চিত করে যথা সময়ের মধ্যে মজুরি পরিশোধ, কর্ম পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখা এবং এ ধরনের আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছিল। আজ এ শিল্পটি শ্রম অধিকারের সব ইস্যুতেই নিবিড়ভাবে কাজ করছে।
, ★করোনায় যেন জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে শ্রমিকদের করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়, সে বিষয়েও বিজিএমইএ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইএলও ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের আলোকে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর জন্য স্বাস্থ্যবিধি/প্রটোকল প্রণয়ন করেছে এবং পোশাক কারখানাগুলো কঠোরভাবে এ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হচ্ছে।
★কারখানাগুলো যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কি-না তা বিজিএমইএ থেকেও প্রতিনিয়ত নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। পোশাক শ্রমিকদের সংক্রমণ পরীক্ষায় বিজিএমইএ গাজীপুরের চন্দ্রায় বিশ্বমানের পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছে। এ কারণে শ্রমিকদের করোনা সংক্রমণের হার ০.০৩ শতাংশে রাখা সম্ভব হয়েছে।
★ আমাদের সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে শিল্পে স্থাপত্য, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনন্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডসমূহ, আইএলও’র মতো দাতা সংস্থা সহায়তা প্রদান করেছেন।
★প্রত্যেক কারখানায় সেফটি কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিকদের পার্টিসিপেশন কমিটিও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় তহবিল গঠিত হয়েছে, যেখানে শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য পোশাক কারখানাগুলো তাদের রপ্তানি আয় প্রাপ্তির বিপরীতে ১ কোটি ডলার প্রদান করছে।
★বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন ও শ্রমিকদের কল্যাণে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন কমপ্লায়েন্স সল্যুশনস প্রোভাইডার, তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইথিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং দেশ হিসেবে স্থান দিয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে সবুজ শিল্পায়নে অনন্য নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিজিএমইএ “২০২১ ইউএসজিবিসি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড” সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে। ২০৩০ এর মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃস্বরণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার অভিপ্রায় নিয়ে বিজিএমইএ ইউএন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি চার্টার ফর ক্লাইমেট অ্যাকশনের সাথে যুক্ত হয়েছে
পোশাক শিল্পের সম্ভাবনাঃ
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলা যায়। কারণ বাংলাদেশের পর্যাপ্ত শ্রমিকের যোগান বিদ্যমান যা সস্তায় পাওয়া যায়। তাছাড়া পোশাক শিল্পে সস্তায় নারী শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এদেশের শ্রমিকের মজুরি তুলনামূলকভাবে কম। যা স্বল্পমূল্যে অধিক উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করে। এছাড়াও স্বল্প মূলধনে শিল্প স্থাপন, অধিক বিনিয়োগ প্রবণতা, উদার শিল্পনীতি প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের সম্ভাবনাকে আরো বেশি জোরালো করেছে।
উপসংহারঃ
বর্তমান বিশ্ব মুক্তবাজার অর্থনীতির বিশ্ব। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। উদ্ভূত সমস্যাসহ কোটা ও জিএসপিমুক্ত বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই পোশাক শিল্পের অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকলে মিলে একসাথে কাজ করতে হবে।
আরো পড়ুন........
- রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে -Is as deep as the night , the morning to come to the near.
- *করোনা ভাইরাস ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট *করোনা ভাইরাস রচনা (Coronavirus Essay) *অতিমারী
- কোভিড-১৯
- ভাবসম্প্রসারণ দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য।
Comments
Post a Comment