বিপরীত শব্দ কাকে বলে? || বিপরীত শব্দ কি? || বিপরীত শব্দের গঠন প্রনালী ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর?

বিপরীত শব্দ কাকে বলে?||বিপরীত শব্দ কি:

বিপরীত - শব্দ বা বিপরীতার্থক শব্দ(antonym):

একটি শব্দ যে ভাব বা অর্থ প্রকাশ করে অন্য একটি শব্দ তার বিপরীত ভাব বা অর্থ বােঝালে শব্দ দুটিকে পরস্পরের  বিপরীতার্থক শব্দ বা বিপরীত - শব্দ' ( antonym ) বলা হয়।বিপরীত
শব্দগুলাের কিছুকিছু ভিন্নশব্দ , আবার কতগুলাে বিভিন্ন উপসর্গ যােগে গঠিত হয়।

 অথবা , একটি শব্দের বিপরীত অর্থবাচক শব্দকে বিপরীতার্থক শব্দ বলে ।

অথবা , যে সব শব্দ অন্য কোনাে শব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে তাদেরকে বিপরীত - শব্দ ' বা বিপরীতার্থক শব্দ।

উদাহরণঃ
সুখ - দুঃখ , উত্তম - অধম , অর্থ - অনর্থ , অবনত - উন্নত , আয় - ব্যয় , আদি - অন্ত , একাল - সেকাল , অধিক – অল্প  জীবিত - মৃত , কম - বেশি , সবল দল ইত্যাদি ।

ড. সুনীতিকুমারের মতে, দুটি শব্দের অর্থ পরস্পর বিপরীত হইলে, শব্দ দুটিকে বলা হয় বিপরীতার্থক শব্দ।

ড. সুকুমার সেনের মতে, কোন শব্দ অন্য একটি শব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করলে সে শব্দ দুটিকে পরস্পরের বিপরীতার্থক বা বিপরীত শব্দ বলে।


বিপরীত শব্দের গঠন প্রনালীঃ

বিভিন্ন উপায়ে বিপরীত শব্দ গঠন করা যেতে পারে। যেমন :

◇১. বিপরীত শব্দ বিশেষভাবে নাবোধক অর্থ প্রকাশ করে। যেমন : ভালো—মন্দ, সবর—নীরব।

◇২.একটি শব্দের হুবহু বিপরীত শব্দ গঠিত হয়।
যেমন : ভালো-মন্দ।

◇৩. শব্দশ্রেণি অনুসারে বিপরীত শব্দ হয়।
যেমন:

ক) বিশেষ্য ও বিশেষ্য শব্দের বিপরীত শব্দ হয়।
যেমন : দিন—রাত।

>খ) বিশেষণ ও বিশেষণ শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : ভালো—মন্দ, সবর—নীরব

>গ) ক্রিয়া ও ক্রিয়া শব্দের বিপরীত শব্দ হয়।           যেমন : হাসি—কান্না

ঘ) ক্রিয়াবিশেষণ ও ক্রিয়াবিশেষণ শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : প্রকাশ্যে—গোপনে

◇৪. শব্দের উৎপত্তি অনুসারে বিপরীত শব্দ হয়। যেমন:

>ক)  সংস্কৃত ও সংস্কৃত শব্দের বিপরীত শব্দ হয়।
 যেমন : স্বেত—কৃষ্ণ।

>খ)  তদ্ভব ও তদ্ভব শব্দের বিপরীত শব্দ হয়।
যেমন : সাদা—কালা।

>গ) বিদেশি ও বিদেশি শব্দের বিপরীত শব্দ হয়।
যেমন : ইহকাল—পরকাল

◇৫. শব্দের গঠন  অনুসারে বিপরীত শব্দ হয়। যেমন:

>ক) একটি শব্দের পূর্বে উপসর্গযুক্ত হয়ে বিপরীত শব্দ গঠিত হয়। যেমন : সুঅভ্যাস—কুঅভ্যাস

>খ) শব্দের পরে বা আগে শূন্য, না, বি, বে, অ, ছাড়া, হারা, হীন, বিহীন যুক্ত হয়ে বিপরীত শব্দ হয়।
যেমন : যুক্তিপূর্ণ—যুক্তিশূন্য, জানা—না জানা, খোঁজ—নিখোঁজ, বিপদ—বিপদহীন।

>গ) কারক অনুসারে বিপরীত শব্দ গঠিত হয়। দুটি শব্দের কারক অক্ষুণ্ন থাকবে।
যেমন : প্রভাতে-সন্ধ্যায় (অধিকরণ), আসলকে-নকলকে (কর্ম) যত্নে-অবহেলায় (করণ), নিজের-পরের (সম্বন্ধপদ)

>ঘ) নরচিহ্ন ও নারী চিহ্ন বা নারী চিহ্ন ও নরচিহ্ন অনুসারে বিপরীত শব্দ গঠিত হয়।                        যেমন : ছেলে—মেয়ে, স্ত্রী—পুরুষ।

প্রয়ােজনীয়তা :

ভাষার জগতে শব্দের বৈপরীত্য , শব্দের অর্থের যথার্থতা ও ভাষার সৌন্দর্য বিধানে বিপরীত শব্দের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য । নিচে এর প্রয়ােজনীয়তার দিকগুলাে তুলে ধরা হলাে-

● বিপরীত ভাববােধক শব্দসমূহ শব্দজ্ঞানের গভীরতা প্রকাশ করে ও ভাষাকে বিশেষভাবে সমদ্ধ করে । এতে মনে যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা জনে ।

● দুটি বিপরীতধর্মী শব্দের ব্যবহারে বক্তব্য বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।

● সমপূর্ণ বিপরীতধর্মী মনােভাব প্রকাশের জন্যে বিপরীত শব্দের প্রয়ােজন হয় ।

●মনের ভার যথাযথরূপে প্রকাশ , ভাষার শ্রুতিমাধুর্য এবং সৌকর্য বর্ধনে বিপরীত শব্দ গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

● বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ের যুক্তিযুক্ত উপস্থাপনে বিপরীত - শব্দের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে ।

● বিপরীত শব্দ ভাবপ্রকাশের অনুকূল হওয়ায় ভাষাশৈলী সহজতর হয় ।

● বাক্য গঠনে বৈচিত্র্য আনয়ন করে ।




আর ও পড়ুন...

Comments

Popular posts from this blog

রাষ্ট্র বিজ্ঞান কাকে বলে? || রাষ্ট্র বিজ্ঞান কী? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বলতে কি বুঝায়? || রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও? (What is Political Science?)

চাঁদ শব্দের প্রতিশব্দ/ সমার্থক শব্দ কিকি?

GDP ও GNP কাকে বলে? || GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য কি?